বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কথাশিল্পী এবং ছোট গল্পকার হাসান আজিজুল হক লিখেছেন, “ঔপন্যাসিক হিসাবে বাংলাদেশে এবং বর্তমান বাংলা সাহিত্যে একজন জিনিয়াসের আবির্ভাব ঘটেছে। সেই জিনিয়াসের নাম কাজী রাফি। উত্তরের উষর জনপদ হতে শওকত আলী, সৈয়দ শামসুল হক এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের পর তাদের যোগ্য উত্তরসূরি কাজী রাফিকে আমরা পেয়েছি। এই বইয়ের (ত্রিমোহিনী) অনুবাদ হোক। এই বই সারা পৃথিবীতে জানান দিক যে, খুব বড় করে কল্পনা করার, ইতিহাসকে বড় করে তোলার মতো। ঔপন্যাসিক আমাদেরও আছে…।” [সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা কালি ও কলম, দ্বাদশ বর্ষ, নবম সংখ্যা, অক্টোবর-২০১৫]
কাজী রাফির লেখার বিষয়বস্তু উপন্যাস এবং ছোটগল্প। অরোরার মনস্তত্ব নিয়ে খেলতে খেলতে শেষে মানুষের ভালোবাসার শক্তির জয়গান গাওয়ার এক অভিনব কৌশলে কাজী রাফির লিখেছেন এই উপন্যাস -অরোরার আঙুল।
ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হবে ঝিনুকে

জাতিসংঘের পশ্চিম আফ্রিকায় অর্থ-বিভাগে চাকরির কারণে তাকে যেদিন প্রথম মাতৃভূমি, বাবা-মা, প্রিয়জন ছেড়ে অজানার উদ্দেশে বিমানে উঠে বসতে হলো সেদিন অরিত্রের কেমন কান্না পাচ্ছিল। ভোরের জেগে ওঠার সাথে মাত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠা উদার নীলাকাশের নিচে

অরোরাই তার পরবর্তী উর্ধ্বতন কর্তা – অফিসে গিয়ে এই তথ্য জানার পর অরিত্র আনন্দিত হয়ে উঠল। আর এই ভেবে অবাক হলো যে, সেই অরোরাই তাকে আপ্যায়নই শুধু নয় তার কাজগুলো নিঁখুতভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে।

“আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ থেকে অতিমাত্রায় যোগ্য না হলে এই সংস্থা কখনোই এখানে আমাকে নিয়োগ দিত না, স্যার। তবু, আপনার কথাগুলো আমার মনে থাকবে এবং আজ সন্ধ্যায় আমি অফিসে আসব।“

মৃদু শব্দে আধো-ঘুম, আধো জাগরণ থেকে অরোরার স্নায়ু সজাগ হয়ে উঠল। অরোরা ধরেই নিল অরিত্র ঘরে প্রবেশ করছে। সুতরাং সে চোখ দুটো আরো ভালোভাবে বন্ধ করে ঘুমানোর ভাণ করল। মাতোমা সন্তর্পণে তার পাশে এসে বসল।

চাকরির প্রাথমিক দিনগুলোতে অফিস বাদ দিয়ে সিনিয়র সহকর্মীর সাথে আবেগ-ঘন পরিবেশ তৈরি করতে পারাটা যার বিরাট যোগ্যতা – আমার কাছে সে অযোগ্য।

তাদের শাসনামলে দেশ-উন্নয়নের মহান প্রতীক এই চেরাগের মৃদু আলোয় তালেবান-কর্তা একটানে ছিঁড়ে ফেলেছে অরোরার শরীরের সব পোষাক। অরোরা তার গালে কষে এক থাপ্পড় বসাচ্ছে। তার শাস্তি হিসেবে কয়েকজন তালেবান সৈনিক লম্বা ধারালো চাকু আর কাঠের গুড়ি যোগাড় করেছে ।

যেখানেই যাও, যা ইচ্ছা করো… আমার হাত থেকে তোমার রেহাই নেই। ভালো মানুষের ভাণ ধরে, অপেক্ষা করে করে হয়তো শেষমেশ তোমাকে পাওয়া হবে না। কিন্তু ম্যাম, আমিও তখন আমার চাকরির মাথায় জল ঢেলে হলেও, তোমাকে জোরপূর্বক দখল করব। মাঝখান থেকে জীবন হারাবে গোবেচারা অরিত্র!

অরোরার কাছ থেকে তার জীবনের ছোট্ট অথচ সবচেয়ে যাতনাময় পর্বের কথা জেনে সংবেদনশীল মনের অরণির হৃদয় হাহাকার করে উঠল। তিনি আলতো করে অরোরাকে জড়িয়ে নিতেই সে তার কাঁধে পরম নির্ভরতায় মাথা রেখে মনের কথা বলার মতো এক মানুষ পেয়ে তার কাছে আশ্রয় খুঁজে ফিরল।

অরোরার কাছ থেকে তার জীবনের ছোট্ট অথচ সবচেয়ে যাতনাময় পর্বের কথা জেনে সংবেদনশীল মনের অরণির হৃদয় হাহাকার করে উঠল। তিনি আলতো করে অরোরাকে জড়িয়ে নিতেই সে তার কাঁধে পরম নির্ভরতায় মাথা রেখে মনের কথা বলার মতো এক মানুষ পেয়ে তার কাছে আশ্রয় খুঁজে ফিরল।

একজন রাষ্ট্রীয়-ক্ষমতার মানুষ এমনকি একজন বিজ্ঞানীর চেয়ে একজন মহান গল্পকার একটা সমাজের জন্য বেশি প্রয়োজন। কেন না, একজন গল্পকারের কাছ থেকে রহস্যময় কল্পনা জগতে ঢোকার প্রেরণা পান একজন বিজ্ঞানী, একজন গল্পকার অথবা ঔপন্যসিকই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তির কাছে মানুষের জীবনের আর্তিকেই গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করাতে শেখান।

বন-পুকুরের সান্নিধ্যের দিনটা অরোরার প্রতিদিন একই ধরণের ব্যস্ত আর পানসে জীবনে বর্ণিল আর বৈচিত্রময় আনন্দমুখর এক দিন হয়ে থাকল। এবং আজ সে স্পষ্ট অনুধাবন করল যে, বৈচিত্রময়তাই জীবনকে লম্বা করে দেয়। মাত্র ত্রিশ ঘণ্টা পার হয়েছে অরিত্রদের বাসার চারপাশের এই নিরিবিলি পরিবেশে। তবু অরোরার মনে হচ্ছে, অনেক অনেক দিনের আনন্দমাখা স্মৃতি জমা হয়েছে তার মানসপটে।