কদম ফুলের গন্ধ
আসাদ মান্নান
এ কেমন দুঃসময় ─বর্ষা আছে বৃষ্টি নেই;
বৃষ্টি ছাড়া বর্ষার প্রকৃত রূপ খুঁজে পাওয়া যে মুশকিল ;
উপরন্তু এখন পৃথিবী জুড়ে কী নির্মমভাবে
মহামারী করোনার একক সাম্রাজ্যে
মৃত্যুর উল্লাসে নৃত্যরত যমরাজ;
মানুষ ও প্রকৃতির সঙ্গে জানি জন্মগতভাবে
বর্ষার একটা মিষ্টি মধুর সম্পর্ক আছে,
মেঘ ও জলের অন্তরঙ্গ সহবাসে শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
কী যে সুখ শিহরণ জাগে!
অথচ অবাক হয়ে দেখি, মেঘের ভেতরে মৃত জলপরী
বর্ষাকে জড়িয়ে গায়ে সাড়াশব্দহীন পড়ে আছে;
বৃষ্টির লক্ষণ বলে কোথাও কিছুই দেখছি না।
সময় খারাপ হলে এরকম হয়; বর্ষা তার
জলজ আদলখানি ভয়ে ভয়ে লুকিয়ে রেখেছে;
এখানে-ওখানে চরে হাটে ঘাটে অলিতে গলিতে
কয়েক মিনিট ধরে মাঝেমধ্যে দুই এক ফোঁটা
বৃষ্টি হয় ─ একে আর যা-ই বলা হোকনা কেন
বর্ষা বলা উচিৎ হবে কি? না, হবে না।
মেঘ ও বৃষ্টির প্রকৃত রূপ না-দেখে বর্ষা নিয়ে
বিরহের স্মৃতি থেকে আমি এই কবিতাটি লিখছি;
পলাতক বর্ষা নিয়ে ছোটো একটি কবিতা লিখতে
আমাকে এমনভাবে সাময়িকী সম্পাদক কবি
প্রিয় বন্ধু আলমগীর রেজা হামেশা তাগিদ দিচ্ছে;
চৌধুরী নাছোড়বান্দা, তার অনুরোধ ফেলে দেওয়ার
সাধ্য কি আমার আছে? ও রীতিমতো হুমকি দিচ্ছে
আমার কবিতা ছাড়া তার পত্রিকার সাহিত্যের পাতা
বের করবে না। দ্যাখো তো দেখি, ক্ষ্যাপা পাগলের হুমকি!
বন্ধু বলে কথা! বন্ধুর ভালোবাসার
এমন দায় ও দাবি আর কাকে বলে?
বস্তুত বন্ধুর অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে গিয়ে আমি
গত সন্ধ্যা থেকে আস্ত একটা সমুদ্র গিলে বসে আছি,
আকাশের বুকটাকে তন্নতন্ন করে চেটেপুটে
সব মেঘ বুকে তুলে রাখি; দেখি, বর্ষা দূরে থাক
এক ফোঁটা কান্নাও ঝরেনি আমাদের কবিতা পাড়ায় —
কাল সারা রাত বৃষ্টির বদলে আমি কুড়িয়েছি
শৈশবে হারিয়ে যাওয়া একগুচ্ছ কদমের গন্ধ।