আপনি হয়তো ঢিমে তেতালা ভাব নিয়ে বেশ ঢিলে ঢালা পোশাক পরে ভ্রমণে বের হয়ে, ঢুলু ঢুলু চোখ নিয়ে ট্রেনের জানলা দিয়ে বাইরে দেখছিলেন। ঠিক সে সময় ‘অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া’ জাতির কেউ একজন চলন্ত ট্রেনটিকে লক্ষ্য করে মারল একটা ‘ঢিল।’ বিকট শব্দ শুনে আশে পাশের লোকজন ঢ্যামনার মতো তাকিয়ে রইলো, কিন্তু যা সর্বনাশ তা হলো আপনার!
ট্রেন, বরাবরই ভ্রমণে সবচেয়ে আরামদায়ক বাহন হিসেবেই বিবেচ্য। কিন্তু এ ‘আরাম’ হারাম হবার উপক্রম হয়েছে, এই ঢিল ছোড়াছুড়ির কারণে। চলন্ত ট্রেনে ঢিল ছোড়া একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। দিনকে দিন এর বৃদ্ধিপ্রাপ্তি যেন আমাদেরকে চোখে হাত দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে, মানসিক ভাবে আমরা কতটা অসুস্থ। একজন মানুষ হয়ে অন্য মানুষের –নিছক খেলাচ্ছলে ক্ষতি করা পারিবারিক সু শিক্ষার মন্দভাবকেই বোঝায়।
এ পর্যন্ত এ বছর চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১১০টি, এতে ট্রেনের জানালার কাঁচ ভেঙেছে১০৩টি এবং আহত হয়েছেন ২৯ জন। দৃষ্টিশক্তি হারানোর, মারাত্মকভাবে মাথায় আঘাত পাওয়ার মতো অনেক ভয়াবহ ঘটনাও ঘটেছে ইতোমধ্যে।
তবে চলন্ত ট্রেনে বেশি পাথর মারা হয়—এমন ১৫টি স্থান চিহ্নিত করেছে রেলওয়ে। এসব স্থানে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন রেল-মন্ত্রী।
এছাড়া ট্রেনে পাথর মারার অপরাধে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, এমনকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আছে। আর পাথরের আঘাতে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
তবে খুবই মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ পর্যন্ত পাথর মারার দায়ে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই শিশু, টোকাই, ভবঘুরে অথবা অপ্রকৃতিস্থ। ফলে কাউকেই সাজা দেওয়া যায় নি। এসব কারণে সরকার এখন ট্রেনের জানালায় নেট বসানোর ব্যবস্থা করছে।
যদিও ট্রেনে ঢিল ছোড়ার ব্যাপারটি খুবই পুরনো একটি সমস্যা তাই এটি প্রতিরোধে সচেতনতায় জোর দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও আইনের প্রয়োগে সরকারকে আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া উচিৎ।
ছবিঃ অভিষেক কর্মকার।
সালমা চৌধুরী