ইটালিয়ান কবি এবং গীতিকার গিও ইভান একটি গানে বলেছিলেন-
“Travel,
otherwise you end up believing
that you are made only for a panorama
and instead inside you
there are wonderful landscapes
still to visit.”
ভ্রমণ আমাদের বাংগালীদের জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেনি এখনো, কিছুদিন আগেও তা ছিলো একেবারেই অপ্রচলিত। এখন অবশ্য শুরু হয়েছে, তবে নারী তা বিশেষ করে একলা নারী এবং সন্তানের জননী, সংসারী নারীর জন্য ভ্রমণ খুব একটা সহজ নয়।
যে নারী বারান্দায় কাপড় মেলতে গিয়ে কেবল গ্রীলের ফাঁক দিয়ে আকাশটা দেখেন তার হয়তো ইচ্ছে জাগে একলা অদেখা অঞ্চলে ভ্রমণ করার। কিন্তু সংসার তাকে যেনো আষ্টেপিষ্টে বেঁধে রেখেছে তাই এ ভাবনাটা মাথায় আনাটাই দুষ্কর।
এখনো নারীকে একা ভ্রমনে পদে পদে দিতে হয় সীতার মতো অগ্নিপরীক্ষা। এমনকি এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন পাড়ি দেবার সময়, “একলা! সাথে কেউ নেই! বাড়ির থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন না তো!”- এসব বিব্রতকর প্রশ্ন শুনতে হয়। কিন্তু তাই বলে পিছ পা হওয়া যাবে না, এগিয়ে যেতেই হবে।
সেকালে কলকাতার ইংরেজ সাহেবগন Holiday তে যেতেন, সেটা দেখে অধীনস্থ বাঙ্গালী বাবুরাও যেতেন। এজন্য ভ্রমণটা কলকাতার বাঙালি দের মাঝে, বংশ-পরম্পরা এসেছে। কিন্তু আমাদের দেশে এ বিষয় টি এখনো পাকাপোক্ত হয়ে মনে বসেনি। তাই একলা নারী ভ্রমণ ভাবনায় আনতে আমাদের হয়তো আরও সময় লাগবে।
তবুও বলবো, হে নারী! একবার সাহস করে বেড়িয়ে দেখুন না, পথের সঙ্গীরাই আপনাকে পথ দেখিয়ে দিবে।সংসারের দুটো পয়সা বাঁচিয়ে না হয় শাড়ি না কিনে তা দিয়ে ভ্রমণে বের হোন। দেখবেন আবিষ্কারের নেশা তখন আপনাকে পেয়ে বসবে। একটু বাড়তি রান্না করে রেখে ঘরটিকে সামলিয়ে, নিজের পাথেয় যোগাড় করে বেড়িয়ে পরুন মনের আনন্দে। আপনার এই সাজানো-গোছানো বাড়ির কাছেই আছে আরশীনগর আর সেথা কোন পড়শী বসত করে, একবার যেয়ে দেখুন।
তাই তো নারীদের বলছি, নিজেকে নিজেই বানিয়ে ফেলুন ভ্রমণ সঙ্গী। তবে ভ্রমণের প্রস্তুতি হিসেবে একজন নারী যে কাজগুলো করতে পারেনঃ
- সংসারের বাড়তি খরচ কমিয়ে, কিছুটা জমানোর চেষ্টা করুন।
- পরিবারের জন্য বেশি করে রান্না করে তার সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। সেটা হলে বাড়ির সবার সুবিধা হবে।
- যদি সন্তানকে নিয়ে ভ্রমণে যেতে চান, তবে তার স্কুল / কলেজের ছুটির দিনটা মাথায় রাখুন।
- যে স্থান ভ্রমণের জন্য নির্বাচন করবেন তার সম্পর্কে তথ্য আগেই জেনে রাখুন।
- ভ্রমণের জন্য যোগাযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কাছের লোকজন, বন্ধু অথবা আত্মীয়ের কাছে ওই জায়গাটি সম্পর্কে জেনে নিন ও নিজের অবস্থান তাদেরকে জানাতে পারেন। তাহলে দরকার হলে সাহায্য পাওয়া যাবে।
- এছাড়া সম্ভব হলে ব্যাগ হালকা রেখে ঝামেলা মুক্ত থাকুন। এতে ভ্রমণ সহজতর হবে। তবে পরিচয়পত্র, প্রয়োজনীয় ওষুধ, নিজের একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে কখনও ভুলবেন না।
- সর্বোপরি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন। এটি কেবল ভ্রমণের জন্য নয়, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য খুব জরুরী।
ভ্রমণ মানুষের অন্তর্দৃষ্টি কে খুলে দেয়, জীবনকে উপভোগ করতে শেখায়, তাই ভ্রমণ করুন। ভ্রমনের প্রতি পরতে পরতে রোমাঞ্চ অনুভব করতে শিখুন,তাহলে আপনার জীবন হবে আরো সুন্দর ও ছন্দ ময়।
বুঝতে পারছি, প্রতিটি নারীর সাথে নাড়ীর বন্ধনে এই সংসার জড়িয়ে আছে। কিন্তু রান্নাঘরের কড়াইয়ের তেলে পাঁচফোড়নের ধোঁয়ায় জীবন ঘোলাটে হওয়ার আগেই অন্তত একবার উপভোগ করে দেখুন না, কি শান্তি এই ভ্রমণে!
ছবিঃ মোঃ নাজমুস সাকিব।
সালমা চৌধুরী