১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হাতে পঞ্চাশ হাজার বাঙ্গালীর মৃত্যু হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা সেই রাতটার বর্ণনা করি ‘কালরাত্রি’ হিসেবে। তবে ওরা সেই সেনা অভিযানের কোডনেম দিয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও সামরিক শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে। আসলে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, যে-কোনভাবে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা। এমন পরিস্থিতিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চে ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু ১লা মার্চেই অপ্রত্যাশিতভাবে সেই অধিবেশনটি অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন।
ফলে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়।
৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুলসংখ্যক লোক একত্রিত হয়। সাধারণ জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তার সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন এবং ১৬ই মার্চ শেখ মুজিবের সঙ্গে সরকার গঠন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেন।
কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাশকরা সেই কাল রাত্রির এক সপ্তাহ আগে, ১৮ই মার্চেই ‘অপারেশন সার্চলাইট’ পরিকল্পনা করা রেখেছিল, সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোর পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।
সেনাবাহিনীর জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে ঢাকায় প্রেরণের পাশাপাশি সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠানো হতে থাকে। ১৯শে মার্চ ইয়াহিয়া-মুজিব তৃতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
২১শে মার্চ আলোচনায় যোগ দিতে জুলফিকার আলী ভুট্টো ১২ জন উপদেষ্টাকে সফরসঙ্গী করে ঢাকা আসেন।
২২শে মার্চ ভুট্টো-মুজিবের ৭০ মিনিটের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনেক আশাবাদ ব্যক্ত করা সত্ত্বেও ভুট্টো-মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক সফল হয়নি।
পূর্ব পাকিস্তানে ২৩শে মার্চ প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়।
এরকম প্রেক্ষাপটে অপারেশন সার্চলাইট স্থির করা হলো রাজনৈতিক সমঝোতা ‘ব্যর্থ’ হলে সামরিক অভিযান চালিয়ে ‘পাকিস্তান সরকারের কর্তৃত্ব’ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
‘অপারেশন সার্চলাইটর‘ অন্যতম পরিকল্পনাকারী মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ১৪তম ডিভিশনের জিওসি ছিলেন) তার স্মৃতিচারণমূলক বইতে (A Stranger in My Own Country: East Pakistan, 1969-1971) লিখেছে,
At about 10 p.m. on 17 March, I received a call from Lieutenant General Tikka Khan asking Major General Farman and me to go over to the Command House to see him. Some days earlier, Farman and his wife had left the Governor’s House and were living with us in the cantonment. We both went and found that General Abdul Hamid Khan was also present. Tikka Khan informed us that the negotiations with Sheikh Mujib were not proceeding well and the President, therefore, wanted us to be ready for military action and to prepare a plan accordingly. No further verbal or written directions were issued. We were told to plan together and discuss the plan with the two dignitaries on the evening of 18 March.
On the morning of 18 March 1971, Farman and I assembled in my office to work on the plan. I had arranged that my wife would keep our Bengali ADC busy and away from my office. I did not want to arouse his suspicions about Farman working with me in my office the whole morning as it was a very unusual get-together in that environment. ….
সিদ্দিক সালিক ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সে তাঁর বইতে (witness to surrender) লিখেছে,
Major-General Khadim Hussain was brooding over the possible outcome of political talks on 25 March when his green telephone rang at about 11 a.m. Lieutenant-General Tikka Khan was on the line. He said, ‘Khadim, it is tonight.’
It created no excitement for Khadim. He was already waiting for the fall of the hammer. The President’s decision coincided with the second anniversary of his assumption of power. General Khadim passed the word to his staff for implementation. The lower the news travelled, the greater the sensation it created. I saw some junior officers hustling about mustering some extra recoilless rifles, getting additional ammunition issued, a defective mortar sight replaced. The tank crew, brought from Rangpur (29 Cavalry) a few days earlier, hurried with their task to oil six rusty M-24s for use at night. They were enough to make a noise on the Dacca streets.
The general staff of Headquarters 14 Division rang up all the outstation garrisons to inform them of H-hour. They devised a private code for passing the message. All garrisons were to act simultaneously. The fateful hour was set at 260100 hours-1 a.m. 26 March. It was calculated that by then the President would have landed safely in Karachi.
The plan for operation SEARCHLIGHT visualized the setting up of two headquarters. Major-General Farman, with 57 Brigade under Brigadier Arbab, was responsible for operations in Dacca city and its suburbs while Major-General Khadim was to look after the rest of the province. In addition, Lieutenant-General Tikka Khan and his staff were to spend the night at the Martial Law Headquarters in the Second Capital* to watch the progress of action in and outside Dacca.
- A complex of surrealistically modern red-brick buildings, designed by the
famous American architect Louis Kahn. Still incomplete, it had been started during the Ayub Khan regime (October 1958-March 1969) as a sop to mounting Bengali resentment sharpened by the construction of a new federal capital at Islamabad in West Pakistan. The Second Capital stands on the south-western fringe of Dacca airport.
[hfe_template id=’81’]
অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা সম্পর্কে খাদিম হুসাইন রাজা তার বইতে লিখেছে, পরিকল্পনার মূল দিকগুলো হলো:
- যে কোন ধরণের বিদ্রোহ বা বিরোধিতাকে কঠোরভাবে দমন করা হবে
- সফল হওয়ার জন্য আকস্মিক চমক এবং চাতুরীর গুরুত্ব আছে। সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকেও চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে তাদের সাহায্য করার পরামর্শ দিয়েছিল
- বাঙ্গালি সেনা সদস্য ও পুলিশকে নিরস্ত্র করা হবে। বিশেষ করে পিলখানায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের অস্ত্রাগার, রাজারবাগের রিজার্ভ পুলিশ এবং চট্টগ্রামে কুড়ি হাজার রাইফেলের অস্ত্রভাণ্ডারের নিয়ন্ত্রণ আগেভাগে নিয়ে নেয়া
- অপারেশন শুরুর সাথে সাথে সব রকমের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে নতুন করে যাচাই-বাছাই করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হবে
- অস্ত্রশস্ত্র এবং অপরাধীদের খোঁজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ঘিরে ফেলতে হবে, এবং তল্লাশি চালাতে হবে
- শেখ মুজিবকে জীবিত অবস্থায় ধরতে হবে। এর বাইরে ১৫ জন আওয়ামী লীগ এবং কম্যুনিস্ট পার্টির নেতার বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হবে, তাদের কাউকে পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করতে হবে।
২৫শে মার্চ ভুট্টো-ইয়াহিয়া রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে বাঙালি নিধনযজ্ঞের সবুজ সংকেত অপারেশন সার্চলাইট প্রদান করে সন্ধ্যায় গোপনে পশ্চিম পাকিস্তান যাত্রা করেন। উইং কমান্ডার এ. কে. খন্দকার শেখ মুজিবকে বিষয়টি জানান।
শেখ মুজিবুর রহমান ২৫শে মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে অর্থাাৎ ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ধানমন্ডির ৩২ নং বাড়ি থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়:
“এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক। জয় বাংলা
স্বাধীনতা ঘোষণার পরই রাত ১টা ৩০ মিনিটে শেখ মুজিবকে সেনাবাহিনীর একটি দল তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে সামরিক জিপে তুলে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যায়। ঐ রাতে তাকে আটক রাখা হয় আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে। পরদিন তাকে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে বিমানে করে করাচিতে প্রেরণ করা হয়।
লাহোর থেকে ৮০ মাইল দূরে পাকিস্তানের উষ্ণতম শহর লায়ালপুরের (বর্তমান ফয়সালাবাদ) কারাগারে শেখ মুজিবকে কড়া নিরাপত্তায় নিঃসঙ্গ সেলে – সলিটারি কনফাইন্টমেন্ট-এ রাখা হয়েছিল।
তারপর মুক্তি যুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বঙ্গ বন্ধু তখনও পাকিস্থানে কারাগারে। পাকিস্তান পরাজয়ের ফলে ২০শে ডিসেম্বর ইয়াহিয়া খান ক্ষমতাচ্যুত হয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টো রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ইয়াহিয়া খান জুলফিকার আলী ভুট্টোরকে অনুরোধ করেছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দিতে। তবে ভুট্টো, বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের পরিণতিকথা চিন্তা করে, তাছাড়াও আন্তর্জাতিক চাপের কথা ভেবে নিয়ে শেখ মুজিবের কোন ক্ষতি করতে চাননি। বরং তাঁর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে রাষ্ট্রপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো মিঁয়াওয়ালী কারাগারের প্রধান হাবিব আলীকে আদেশ দিয়ে জরুরি বার্তা পাঠিয়ে দেয়। ২২শে ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমানকে মিঁয়াওয়ালী কারাগার থেকে নিয়ে গিয়ে একটি অজ্ঞাত স্থানে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। এরপর ২৬শে ডিসেম্বর সিহালার পুলিশ রেস্ট হাউজে নিয়ে যায় এবং ঐদিন ভুট্টো শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন। তারপর ২৯/ ৩০শে ডিসেম্বরের পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমেদের সাথে আর ১৯৭২-এর ৭ই জানুয়ারি রাওয়ালপিন্ডিতে ভুট্টোর সাথে মুজিবের বৈঠক হয়। ভুট্টো তাকে পশ্চিম পাকিস্তান আর বাংলাদেশের সাথে শিথিল কনফেডারেশন তৈরি কবরার প্রস্তাব দেন। এক্ষেত্রে শেখ মুজিব ঢাকায় ফিরে না এসে জনগণের মতামত না জেনে কোন প্রকার প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি হন না।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই জানুয়ারি ভুট্টো শেখ মুজিবের পাকিস্তান ত্যাগের ব্যবস্থা করতে বাধ্য হন, রাত ২টায় অর্থাৎ ৮ই জানুয়ারির প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান ও ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি কার্গো বিমান লন্ডনের উদ্দেশ্যে রাওয়ালপিন্ডি ছাড়ে। ভুট্টো নিজে বিমানবন্দরে এসে শেখ মুজিবকে বিদায় জানান। লন্ডনে তাঁরা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এরপর লন্ডন থেকে নয়াদিল্লিতে ফিরে এসে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাতের পর ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
আমি বলবো ওদের অপারেশন সার্চলাইট আর আমাদের কালরাত্রি কেটে গেলো বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসবার সেই দিনটাতে। আর সেই ২৫শে মার্চের কালরাত্রিতে ঢাকার অবস্তা কী হয়েছিল?
শহীদ আনোয়ার পাশা মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে এক অসামান্য বই লিখে রেখে গেছেন –রাইফেল, রোটি, আওরাত।‘ তার বনর্ণায় পাশবীক সেই আক্রমনের ছবি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে:
“… শিল্পী আবদুল্লাহ মনসুর পঁচিশে মার্চের দিবাগত রাত্রে বাসায় একা ছিলেন।
আজকাল মাঝে মাঝে এমন একা থাকতে তিনি ভালোবাসতেন। একা একা অনেক রাত জেগে বেশ কাজ করা যায়। শুধু কাজ? কলহ নেই?
কলহ তাদের সুদীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে ছিল বৈ কি। তবে ততটুকু ছিল যতটুকু সংসারের জন্য স্বাস্থ্যপ্রদ। এবং কলহ করে স্ত্রী কোনোদিন বাপের বাড়ি যাননি।
সেদিন গিয়েছিলেন ছোট বোনের বাড়ি। রাতে বোন আর তাকে ফিরতে দেয় নি। ব্যবসায়ী ভগ্নিপতি ব্যবসা উপলক্ষে গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম। অতএব বোনের কাছে বোনেকে থাকতে হয়েছিল।
আত্মীয় স্বজনের মধ্যে এমনটি তো হতেই পারে। পূর্বেও হয়েছে।
এক ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে আমনের স্ত্রী বোনের কাছে থেকে গিয়েছিলেন।
আমন বলেছিলেন –
আমি কিন্তু ফিরে যাব। ছবিটা আজ শেষ করার কথা।
একটা ছবি আজ তিনি শেষ করবেন। অতএব বাসায় ফিরছিলেন। এবং ফেরার সময় তার
ছেলে-মেয়েদের আদর করেছিলেন।
ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে চুমু দিয়ে বলেছিলেন–
মা মণি, এখন তবে যাই। কাল সকালে এসে তোমাকে নিয়ে যাব কেমন।
-আব্বা, খালা?
-হাঁ, ঠিক বলেছ তো আম্মু, এবার তোমার খালাকেই নিয়ে যেতে হবে। তোমার মা পুরোনো হয়ে গেছে।
অতঃপর আমন তাঁর ছোট শ্যালিকার পানে তাকিয়ে বলেছিলেন–
দেখলি রোজি, আমার মেয়ে কিন্তু তার মাকে চায় না। তার জায়গায় চায় তোকে?
এমনি খানিক হাস্য-পরিহাসের মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন চিত্রশিল্পী আমন। কত রাত হবে তখন? না, খুব বেশি রাত হয় নি। কাজের তাড়া ছিল বলে নটার মধ্যেই তিনি বাসায় ফিরেছিলেন। এবং ফেরার সময় সহসা ঢাকা শহরকে বড়ো বেশি নির্জন মনে হয়েছিল সেদিন।
মাত্র নটার মধ্যেই শহর এমন ঝিমিয়ে পড়ে নাকি? আগে কখনো এমন দেখেননি তো।
শিল্পী আমনের বুকে নিঃঝুম ঢাকা শহরের একটি ছবি গাঁথা হয়ে গেল। এই নিঃঝুমতা কি ক্লান্তির? ঢাকা নগরী এমনি স্থবির হয়ে গেছে? নাকি অন্য কিছু। এ যদি ঝড়ের পূর্বাভাস হয়।
ভাবতে ভাবতেই আমন ঘরে ফিরেছিলেন।
ছবি নিয়ে একান্তভাবে মগ্ন ছিলেন।
বাইরের ছোট-খাট শব্দ সহসা পাবার কথা নয়। অতএব সন্দেহ নেই যে, শব্দটা বেশ বৃহৎ আকারের ছিল।
একটা প্রবল শব্দে আমনের হাতের তুলি কেঁপে উঠল।
পরে পরেই আর একটা শব্দ, তার সঙ্গেই আর একটা এমনি চলতেই থাকল।
প্রচণ্ড শব্দের আর গর্জনের বিরাম নেই। আর শব্দ কি এক রকমের? শব্দের যে এতো বৈচিত্র্য থাকে তা কি আমন কখনো জানতেন। শব্দকে তুলি দিয়ে আঁকা যায় না? – চিত্রশিল্পীর মনে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন সৃষ্টি হল।
তিনি বাইরে এসে বারান্দায় দাঁড়ালেন।
এ কি! আগুন যে সারা ঢাকা শহরই জ্বলছে নাকি?
চারপাশে আগুন, ধোয়া আর গন্ধ। বারুদের গন্ধ।
কী শুরু হল ঢাকা শহরে? ….“
—- সূত্র, উইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলা, বাংলাপিডিয়া, বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা