আবদুল্লাহ আল মোহন
সহকারী অধ্যাপক, গবেষক
আমাদের প্রিয় ভাসানটেক সরকারি কলেজের জন্মদিন ২৪ এপ্রিল। আজ থেকে সাত বছর আগে ২০১৪ সালের এইদিনে ঢাকার কাফরুল এলাকার কাদামাটির ভাসানটেক বস্তির অভ্যন্তরে অনাড়ম্বরভাবে যাত্রা শুরু করেছিলো আমাদের সকলের প্রিয় এই কলেজটি। উল্লেখ্য, ভাসানটেক সরকারি কলেজের আনন্দময় সহশিক্ষার সৃজনশীল আয়োজন ‘মঙ্গল আসর’-এর আয়োজনে প্রতিবছরই অত্যন্ত ঘরোয়াভাবে কলেজের জন্মদিন পালন করার চেষ্টা করেছি আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে। সবাইকে সাথে নিয়ে জন্মদিনের উৎসবের আয়োজন করতে পারলেই বেশি খুশি হওয়া যেতো কিন্তু নানান বাস্তবতার কারণে সেটি সম্ভব হয়ে ওঠে না বলে বেশ খারাপই লাগে। অতিমারী করোনার কারণে গতবারের মতোন এবারও আর কোন আয়োজনই করার সুযোগ থাকছে না। আশাকরি আগামিতে স্বপ্নময় আনন্দ অনুষ্ঠান করতে সক্ষম হবো, যদি এই কলেজেই থেকে যাই ততদিন। অতীতে জন্মদিন পালনে আমাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য প্রিয় সুলতানা খান ম্যাডামকে স্মরণ করছি, তিনি বদলি হয়ে গেলেও সবিশেষ ভূমিকা পালনের জন্য তাকে জানাই ধন্যবাদ আর প্রতিটি জন্মদিনে শিক্ষার্থীদের জন্য চকলেট ও বই-পত্র-পত্রিকা উপহার দেওয়ার জন্য গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাশনা রশীদ ম্যাডামের প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সেইসাথে কলেজের জন্মদিন পালনসহ মঙ্গল আসরের সকল কার্যক্রমে নিরন্তর অনুপ্রাণিত ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করায় কলেজের সম্মানিত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন মহোদয় এবং শিক্ষক পরিষদের শ্রদ্ধাভাজন সম্পাদক ড. মো: বজলুর রহমান রফিক স্যারের প্রতিও জানাই অশেষ কৃতজ্ঞতা, আন্তরিক ধন্যবাদ।
ভাসানটেক সরকারি কলেজের জন্মলগ্ন থেকে অদ্যাবধি শিক্ষকতায় জড়িত থাকার অভিজ্ঞতায় এবং এলাকার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে মেলামেশার সুযোগে সংশয়হীনভাবে বলতে পারি, প্রতিষ্ঠাকালে ১৯৭৪ সালে ভাসানটেকে আসার সময় যে ছিন্নমূল মানুষগুলো ছিলো অসহায় এবং বিপন্ন কিন্তু সাড়ে চার দশক পরে এসে সেই বস্তিবাসীগণ পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় অনেক আত্মবিশ্বাসী এবং নিজ নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতন ও সোচ্চার। এক্ষেত্রে নেপথ্যে ভাসানটেক সরকারি কলেজের মতোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সবিশেষ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে বলেই দৃশ্যমান হয়। সকলেই এখন শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে আগ্রহী। মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষণীয়। ঘরের সাথে সরকারী সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষাঙ্গণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় শিশু শিক্ষার হার বেড়েছে, কমেছে বাল্য বিবাহের হারও। নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই তাদের কন্যাশিশুদের প্রতি সবিশেষ যত্ন গ্রহণ প্রবণতা আমার মনকে নাড়া দেয়। অভিভাবক সভায় মায়েদের উপস্থিতি এবং তাদের মতামত সেকথাই জানান দেয়। ‘মঙ্গল আসর’ পরিচালনার কারণে অনেক পরিবারের সাথে গভীর আন্তরিকতায় মেলামেশার ফলে ভেতর থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের সমাজ বিরোধী কর্মকাণ্ড হ্রাস পেয়েছে, ফলে সামাজিক জীবন মানও ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। সুন্দর জীবনের স্বপ্নই শুধু দেখা নয়, সেই স্বপ্নের সার্থকতার প্রবল আশাবাদ, গভীর আত্মবিশ্বাস, দৃঢ় প্রত্যয় গড়ে উঠেছে ভাসানটেক এলাকার জনসাধারণের মাঝে। প্রিয় কলেজের জন্মদিন তাই সকলের কল্যাণবোধে পথচলার স্বপ্নকে আরো সম্প্রসারিত করার দৃঢ়প্রত্যয় ঘোষণা করে। অধ্যক্ষ মহোদয়ের সুযোগ্য নেতৃত্বে আমাদের অনেকের কাছেই কলেজটি কেবলই কর্মস্থল নয়, হয়ে ওঠে আলোকিত জীবনচর্চার সাধনাপীঠ, ভালোবাসার অধিক্ষেত্র।
[hfe_template id=’81’]
৩.
চারপাশে প্রতিনিয়ত ইতিহাসের বিকৃত ও বিক্রীত উপস্থাপনা দেখে দেখে ভীষণ বিভ্রান্ত মন স্মরণ করে শ্রীযুক্ত যদুনাথ সরকার মহাশয়কে। তিনি মনে করতেন ইতিহাস চর্চার উদ্দেশ্য সত্যের আবিস্কার এবং উদ্ধার; এ সত্য নিত্য ও গুপ্ত সত্য নয়, অনিত্য এবং লুপ্ত সত্য। অতএব এ সত্য দর্শন লাভের জন্য বিজ্ঞানের সাহায্য আবশ্যক। অতীতের জ্ঞানলাভের জন্য চতুরতার শব্দ চয়ন কৌশল অবলম্বন নয়, প্রয়োজন প্রজ্ঞাবান দৃষ্টিভঙ্গির, বুদ্ধি-বিবেচনার সত্য তথ্য সমাহার, সম্ভার। অতীতের অন্ধকারের উপর বুদ্ধির আলো ফেলাই হচ্ছে ঐতিহাসিকের অন্যতম কর্তব্য, অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া নয় মোটেই। অথচ চারপাশে ইতিহাসচর্চাকারীদের মাঝে কেবল অন্ধকারে ঢিলই ছোঁড়া নয়, পাথরও ছুঁড়তে দেখছি অহরহ। ফলে ‘সত্যের মতোন বদমাইশ’ গুম হচ্ছে, নিখোঁজ সংবাদ বাড়ছে, মিথ্যার মোহ-মায়াজালে বিভ্রান্তির জলে হাবুডুবু খেয়ে খেয়ে আমরা কেউ কেউ ‘আত্মরতি সম্মোহন’ রোগে নিজে আক্রান্ত হচ্ছি, সংক্রমণও বাড়াচ্ছি সমাজে। জীবনানন্দ ভাষ্যে যেমন সকলেই কবি নন, তেমনি সকলেই ইতিহাসবিদও হয়ে উঠতে পারেন না। লাগে নিবিড় পাঠ ও পর্যবেক্ষণের নির্মোহ অনুসন্ধিৎসা মন, মনস্বীতা। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম দৃষ্টিতে একারণেই তীব্র হাহাকারে উচ্চারিত হয়েছিলো- ‘বাঙালির ইতিহাস নাই’ ক্ষোভ। আর তাই ইতিহাসের উত্তরাধিকারের দায় মেটাতে প্রতি বছরই এদিন নিয়মিত ক্লাসের বাইরে সময় বের করে রাখি কলেজের জন্মদিন পালন করতে। কিন্তু জন্মদিনের আনন্দ উৎসবের সমারোহ পায় না মানবিক কারণেই। কারণ এদিনেই আমরা বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে থাকি কয়েক বছর বছর আগে সাভার রানা প্লাজায় নিহত-আহতদেরকে, তেমনই ১৯৫০ সালের এই দিনে রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে হতাহত বীরদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মঙ্গল কামনা করি আমরা।
ভাসানটেক সরকারি কলেজের জন্মদিনে কৃতজ্ঞতার সাথে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। কারণ তাঁর একান্ত আগ্রহেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘৬/১১ প্রকল্প’ গ্রহণ করে ঢাকা শহরের নিম্নবিত্ত মানুষের সন্তানের শিক্ষার সুযোগ প্রদানের জন্য সম্পূর্ণ নতুন প্রতিষ্ঠা করা হয় আমাদেরই মতো ৬টি সরকারি কলেজ এবং ১১টি সরকারি বিদ্যালয়। তাঁর মানসম্পন্ন শিক্ষাঙ্গণ প্রতিষ্ঠার মৌলিক চেতনা-আদর্শকে যেন ধারণ করে সমাজ-রাষ্ট্রে প্রকৃত জ্ঞান চর্চার, প্রকাশ ও বিকাশের উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারি সেই ভাবনার জলেও স্নাতক হওয়া জরুরি বলে বিবেচনা করি। কারণ সর্বত্র কেবল সাময়িক অর্থমোহ উত্তেজনায় ফরজ ভুলে নফলের দিকে বেশি প্রীতি-সমাদরের সমারোহ দেখে দেখে চরম দিক্ভ্রান্ত্র, বিপর্যস্ত আমরা অনেকেই। অনন্য ও অণুকরণীয় শিক্ষাঙ্গণ সৃষ্টির যে অসাধারণ স্বপ্ন নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন প্রকল্প পরিকল্পনার বীজ বপন করেছিলেন, সেই অংকুর কাংখিত মহীরুহে পরিণত হওয়া না হওয়া নির্ভর করে এর সাথে সংশ্লিষ্টজনের মানসিকতা, দক্ষতা, প্রজ্ঞার সুষম বিন্যাসে, সঠিক প্রয়োগ যোগ্যতায়। রাশিয়ার চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, সকল অসুখের সবচেয়ে বড় ঔষুধ হচ্ছে শিক্ষা, মানসম্পন্ন সুশিক্ষা সুনিশ্চিত করতে পারাটা। জাতির জনকের কন্যার, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্রী শেখ হাসিনার একান্ত চেতনায় এমন বোধেরই সতত জাগরণ দৃশ্যমান হয় বলেই এই প্রকল্পের কলেজের জন্ম। ফলে এর সাথে জড়িতজনেরা কেবল আজ্ঞাবহনকারী চাকুরে মাত্র নন, অনন্য সৃজনীকর্মের স্বপ্ন নির্মাণ যোদ্ধাও বলে বিবেচনা করি। সহায়ক শক্তি ছাড়া কোন মুকুলই বিকশিত হতে পারে না। সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি, সংশ্লিষ্ট অন্য সকলের প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা জানানোর মধ্য দিয়ে একান্ত ব্যক্তিগত বা নিজস্ব উৎসাহে কলেজের জন্মদিন পালন করি। তাছাড়া ভাসানটেক বস্তিতে কলেজটির প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট এবং সুশিক্ষার সাথে সুশাসনের গভীর সুসম্পর্কের বিষয়টিও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে থাকি। ছেলে-মেয়েদের মনখোলা ভাবনাগুলোও শুনি মন দিয়ে। জন্মদিনের কেকের বদলে যৎসামান্য মিষ্টি চকলেট জাতীয় খাবারের স্বাদও গ্রহণ করি সবাই। উল্লেখ্য যে, প্রতিষ্ঠার শুরুতেই আমরা আমাদের ভাসানটেক সরকারি কলেজের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষের নামকরণও করা হয়েছে বিশ্ববরেণ্য স্মরণীয় জ্ঞানীদের, বিশেষত বিভিন্ন বিষয়ের জনকদের, কৃতি মনীষীদের নামানুসারে। আলোকিত চেতনায় নিরন্তর সজীব থাকতে তাই নিয়মিতভাবে তাঁদের জন্মদিন, প্রয়াণ দিবসও আমরা পালন করার চেষ্টা করে থাকি।
রবি ঠাকুর যেমনটি বলেছিলেন- সন্ধ্যে বাতি দেওয়ার আগে সলতে পাকাতে হয়, তেমনি আমাদের ভাসানটেক সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস খুঁজলে আমাদের কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করতে হয় জাতির পিতাকে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিরন্ন মানুষের মুখে অন্ন দেওয়া, দরিদ্র ও নিঃস্ব ভূমি ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন করা, বস্ত্রহীনদের বস্ত্র, সুশিক্ষিত জাতি ও সকলের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে আমাদের উপহার দিয়েছিলেন। তারই প্রমাণ পাই ভাসানটেক প্রকল্পের ইতিহাস পর্যালোচনায়। জানা যায়, ‘১৯৭৪ সালে আনুমানিক ১,৮০০ পরিবারের বসতি স্থাপনের মাধ্যমে এই বস্তিটির পত্তন হয়। সেই শত শত পরিবারের একজনও স্বেচ্ছায় এই বস্তিতে আসেনি।। কারণ পুরো এলাকাটি ছিলো জঙ্গলাকীর্ণ, কর্দমাক্ত এবং বসবাসের অনুপযোগী।’ সমাজবিজ্ঞানের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে অজানা নয়, ‘বৈষম্যমূলক সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা মহানগরীতে অনেকগুলো বস্তি গড়ে উঠেছে।’ গবেষকদের মতে, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙ্গণ, ভূমিহীনতা, জ্বলোচ্ছাস, বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ এবং গ্রামাঞ্চলে জীবিকার অভাবের কারণে এদেশের হাজার হাজার মানুষ ঢাকামুখী হতে শুরু করে। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের কারণে গ্রামীণ ছিন্নমূল মানুষের ঢাকায় আগমন অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে।… মূলত তখন থেকেই ঢাকা শহরে ব্যাপকভাবে বস্তির উদ্ভব ও প্রসারের সূচনা।’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজধানীর ছিন্নমূল বস্তিবাসী মানুষের জন্য মিরপুরের ভাসানটেক এলাকার প্রায় ৪৮ একর সরকারি খাস জমিতে মাথা গোঁজার মতো একটি জায়গা করে দিয়েছিলেন। তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানুষের মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হন। আর সেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বস্তিবাসি ও নিম্নআয়ের মানুষের মাথা গোঁজার ঠিকানা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েই সুউচ্চ ভবনগুলো নির্মাণ করে সেগুলোতে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
ভাসানটেক বস্তিবাসী ও বাস্তুহারাদের পুনর্বাসনের জন্য বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের রূপকার ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে ১৯৯৬ সালে তাঁরই নেতৃত্বে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছিন্নমূল মানুষের জন্য ঢাকায় সরকারি জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে ভূমি মন্ত্রণালয়। ১৯৯৮ সালে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। পরে ভাসানটেক এলাকায় প্রায় ৪৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তারই ফলে ২০০৩ সালে সরকারি খাস জমি ভাসানটেক প্রকল্পে ১১১টি ভবন নির্মাণ করে বস্তিবাসী ও নিম্নআয়ের মানুষকে স্বল্পমূল্যে পুনর্বাসন করার জন্য তদানিন্তন সরকার একজন ডেভেলপারকে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার জন্য নিযুক্ত করে। কিন্তু ডেভেলপার কোম্পানীটি সরকারের সাথে চুক্তির নানা শর্ত ভঙ্গের কারণে ২০১০ সালে সরকার চুক্তিটি বাতিল করে। ফলে প্রকল্পটির পুরোটা বাস্তবায়ন শেষ হয়নি, অসমাপ্ত অবস্থায় আছে। প্রকল্প এলাকায় এ টাইপের ৬টি ও বি টাইপের ৮টি সুউচ্চ ভবনে আনুমানিক দুই হাজার পরিবারের মাথা গোজার ঠাই নিশ্চিত হয়েছে বলে জানা যায়। এর মাধ্যমে রাজধানীতে আশ্রয়হীন মানুষের মাথা গোঁজার ঠিকানা নিশ্চিত হয়। উল্লেখ্য, ভাসানটেক বস্তিতে বসবাসরত পরিবারগুলোর সন্তানদের লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি সরকারী প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মহাবিদ্যালয়। পাশাপাশি মসজিদও গড়ে তোলা হয়েছে। একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার কথা রয়েছে। থাকছে একটি ফায়ার স্টেশন। বসবাসরত পরিবার যাতে তাদের ছেলেমেয়েদের স্বল্পব্যয়ে বিয়ের আয়োজন করতে পারেন সেজন্য একটি কমিউনিটি সেন্টারও গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে কমিউনিটি সেন্টারের কিছু অংশে ভাসানটেক থানার কার্যক্রম চলছে। যে কোন সময় থানা অন্যত্র সরে যাবে বলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে। আরও ১২টি ভবনের বেজমেন্টসহ আনুষঙ্গিক কাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্প এলাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজধানীতে অবহেলিত এলাকায় যে ১১টি স্কুল ও ৬টি কলেজ নির্মাণের অঙ্গিকার ছিলো, সে অনুযায়ী ১টি কলেজ ও ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ করা হয়। আর এরই ফসল আমাদের ভাসানটেক সরকারি কলেজ এবং স্কুলটি। এই দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অত্র অঞ্চলের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা লাভের পথ আরও সুগম হবে বলে সরকারের পাশাপাশি এলাকাবাসীগণও আশা প্রকাশ করছেন। প্রকৃত ও সঠিক মানসম্পন্ন সুশিক্ষা সুনিশ্চিত করার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করাই হবে জাতির জনকের কন্যার শিক্ষার চেতনাকে সমুজ্জ্বল রাখা। সংখ্যার ভারে যেন মানের অধ:পতন না ঘটে সেদিকে সুনজর দেওয়া অতিব জরুরি বিবেচনা করি। যে চেতনায় প্রকল্পের কলেজ-স্কুলগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার গভীর অন্তর্নিহিত ভাবকে যেন আমরা অনুধাবন করতে ব্যর্থ না হই। তাহলে আমাদের সকল কর্মপ্রচেষ্টাই বিফলে যাবে। অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনের বদলে অসম্মানকে যেন মূল্য না দিয়ে বসি।
[hfe_template id=’81’]
কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস জানাচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর তারিখে সম্পাদিত দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দলিলের মাধ্যমে ভাসানটেক পূনর্বাসন প্রকল্পের মধ্যে হতে ২.০০ একর অকৃষি খাস জমি ভাসানটেক সরকারি মহাবিদ্যালয় এবং ভাসানটেক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। এরপর নানা ধাপ পেরিয়ে প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ শুরু হয়। পুরোপুরিভাবে ভবন চালুর প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল তারিখে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে অর্থনীতির সহযোগী অধ্যপক মো: আব্দুস ছামাদ যোগদান করেন। অধ্যক্ষ নিয়োগ ও যোগদানের মধ্য দিয়েই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুর হয় বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষের যোগদানের তারিখ ও সালকেই কলেজ প্রতিষ্ঠার তারিখ ও সাল হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। ২০১৪ সালের ২১ মে তারিখে ২৪ জন শিক্ষকের পদায়ন ও যোগদানের মধ্য দিয়ে কলেজ সৃষ্টির প্রথম ধাপ অতিক্রান্ত হয়। ইতোমধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। জল, বৃষ্টি, কাঁদা ও যাতায়েতের ব্যবস্থা না থাকায় ভাসানটেক পূনর্বাসন প্রকল্পের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলার একটি কক্ষে শিক্ষক পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। সভায় ধন্যবাদ প্রস্তাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, মাউশির মহাপরিচালক, প্রকল্প পরিচালকসহ কলেজ প্রতিষ্ঠার সহিত সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রতি অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি এবং শিক্ষাসূচি বাস্তবায়ন কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়। শিক্ষকগণের প্রচেষ্টায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় সর্বমোট ৩৫৮ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির মধ্য দিয়ে মহাকালের পথে ভাসানটেক সরকারি কলেজের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। কলেজটির চারতলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। এরপর ৫ ও ৬ তলা তৈরি করা হয়। নানা বাঁধার পর কলেজের নিরাপত্তা প্রাচীরও নির্মাণ করা হয়। শিক্ষকগণের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে ৭২% শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষের বদলির ফলে নতুন যোগদান করেন অধ্যাপক হোসনে আরা শেফালী। তিনিও বদলী হলে নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১৭ সালে ২ মার্চ তারিখে যোগদান করে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে শিক্ষকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সফলভাবে এগিয়ে চলছে ভাসানটেক সরকারি কলেজের সকল কার্যক্রম।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে স্বত:প্রণোদিত হয়ে প্রায়শ:ই অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হয়ে পাঠদান করে শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রেরণা জুগিয়ে থাকেন। সুনামের সাথে কলেজ পরিচালনা করছেন তিনি। অধ্যক্ষ মহোদয়কে সহযোগিতায় শিক্ষক পরিষদের নেতৃত্বে রয়েছেন দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান রফিক। শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণসহ সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সদাতৎপর কলেজের ভিজিলেন্স টিমের শিক্ষকবৃন্দ। সেইসাথে সক্রিয় গাইড শিক্ষকগণও। তাঁরা নিয়মিত নিবিড়ি যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন এবং যে কোন প্রকার সহযোগিতা প্রদানে তৎপর থাকেন। শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল সর্বোপরি উন্নয়ন সাধনেই চলছে অবিরাম সমবেত প্রচেষ্টা। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা হয়, অতিমারী করোনাকালে অনলাইনেও প্রত্যেক শিক্ষক পাঠদানে কৃতিত্বের সাথেই সক্ষমতা দেখিয়েছেন। পুরো কলেজ ওয়াই-ফাই সংযোগে আবৃত। নিরাপত্তা জোরদার করতে সচল রয়েছে কলেজজুড়ে সিসি ক্যামেরা। সময়ে সময়ে কর্মচারীদের ইতিবাচক মানসিকতা সৃষ্টিতে ও আচরণগত উন্নতি সাধনে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হয়। কেবল ভালো ফলাফল নয়, মানসম্মত সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে নিয়মিতভাবে নানাবিধ সৃজনশীল কার্যক্রম যেমন- সাধারণ জ্ঞান ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ, কলেজ ম্যাগাজিন প্রকাশ, বিজ্ঞান ক্লাব, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মতোন বহুমুখী আয়োজন করা হয়ে থাকে। সক্রিয় আছে গার্ল গাইড এবং রোভার স্কাউটের কার্যক্রমও। নিয়মিতভাবে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হয় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণে। কলেজের সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদ বাছাইকৃত ক্লাসিক ছবি দেখা ও আলোচনার মাধ্যমে মননকে সমৃদ্ধ করায় সক্রিয় রয়েছে। রাষ্ট্রীয় তথা সরকার, মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর কর্তৃক নির্দেশিত সকল আয়োজন যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হয়ে থাকে। অতিমারী করোনাকালে দরিদ্র, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিকসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। মেয়েদের উপবৃত্তিপ্রদানের পাশাপাশি যে কোন প্রয়োজনকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। নিয়মিত অভিভাবক সভায় সমস্যা এবং সমাধান নিয়ে মুক্ত আলোচনার সুযোগ থাকে। শিক্ষার্থীদের সর্বোত্তম উন্নতিসাধনকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। তাদের সংস্কৃতিবান ও সুরুচির নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চিত্তের উন্নতির প্রয়োজনে কলেজে গড়ে তোলা হয়েছে নির্বাচিত মানসম্পন্ন বইয়ের একটি মূল্যবান গ্রন্থাগার, যেখানে বসে পাঠ করতে পারে এবং বাড়িতেও বই নিয়ে পড়তে পারে সদস্য ছাত্র-ছাত্রীরা। পাঠাগারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বইয়ের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু’ কর্নার। ছাত্র-ছাত্রীদের হৃদয়ে গভীর দেশপ্রেম ও সঠিক ইতিহাস অনুধাবনে কলেজ ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের পাশে স্থাপন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে ম্যুরাল ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’। যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীও নানা আয়োজনে। কলেজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশের বহুল প্রচারিত পত্র-পত্রিকায় সচিত্র প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য ইতিবাচক প্রতিবেদন। শিক্ষকগণ নিয়মিত বিভিন্ন সেমিনারে নিজেদের গবেষণা প্রবন্ধ পাঠ করে থাকেন। কলেজের শিক্ষকদের লিখিত ও প্রকাশিত হয়েছে একাধিক গ্রন্থ। উল্লেখ্য, কলেজের আনন্দময় সহশিক্ষার সৃজনশীল আয়োজন ‘মঙ্গল আসর’ নিয়ে জাতীয় দৈনিকে সচিত্র বিশেষ প্রতিবেদনের পাশাপাশি সরকারী উদ্যোগে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র ‘মোহনের মঙ্গল আসর’। শিক্ষাকে আনন্দময় ও সৃজনশীল করে তোলার ভাসানটেক কলেজের শিক্ষকের এই সক্রিয় প্রয়াস আজ আমাদের দেশের এবং ওদেশের বাইরের শিক্ষাঙ্গণগুলোতে আলোচিত।
‘এ শহর ক্ষুধাকেই নিঃসঙ্গ বাস্তব জেনে ধুলায় গড়ায়;/ এ শহর পল্টনের মাঠে ছোটে, পোস্টারের উল্কি-ছাওয়া মনে/ এল গ্রেকো ছবি হয়ে ছোঁয় যেন উদার নীলিমা,/ এ শহর প্রত্যহ লড়াই করে বহুরূপী নেকড়ের সাথে।’ ১৯৭০ সালে ঘাতকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যে মুক্তিকামী শহরের বিপন্ন ও লড়াকু ছবি আঁকেন কবি শামসুর রাহমান, তাঁর ‘এ শহর’ কবিতায়, ১৯৭৯ সালে স্বাধীন স্বদেশের সেই প্রিয় ‘স্মৃতির শহর’ ঢাকাকে নিয়ে তিনি লিখেছিলেন এক অনুপম আত্মকথন। কবির এই বই খুঁজে ফিরেছে প্রায় ৫০০ বছর পুরোনো কিন্তু তাঁর চোখে চিরনতুন এক শহরকে। গৎবাঁধা স্মৃতিকথা বা ইতিহাসের বদলে যেনবা রূপকথার কাঠামোতে তুলে ধরেছেন কবি তাঁর প্রাণের প্রহরময় শহর ঢাকাকে। কবি শামসুর রাহমান এভাবে তাঁর সত্তার ছায়া বিস্তার করতে থাকেন এই স্মৃতির শহরজুড়ে। সেই শহরেই গড়ে উঠেছে আমাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান, স্বপ্ন বির্ণিমানের আঙ্গিণা। বঙ্গবন্ধু আর তাঁর কন্যার অবদানে এই শহরেরই অংশ হয়ে উঠেছে ভাসানটেক এলাকা। আমাদের স্মৃতিসত্তায় সদা জাগ্রত থাকে, পরস্পর ছড়িয়ে গিয়ে জড়িয়ে থাকে কলেজের জ্ঞানের আলোর ভুবন- আলোকিত ভবন।
১০.
ঢাকা শুধু বাংলাদেশের রাজধানী নয়। ঢাকা বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজনীতি ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য। চারদিকে নদী পরিবেষ্টিত ঢাকা। চারপাশের নদী ঢাকাকে দিয়েছে ব্যতিক্রম ভৌগোলিক সুবিধাজনক অবস্থান। চারবার রাজধানীর মর্যাদা পেয়েছে ঢাকা। তৃতীয়বারের অভিজ্ঞতা ভালো নয় যদিও। মোগল আমলে বাংলা, বিহার উড়িষ্যার রাজধানী করা হয় ঢাকাকে। নবাব ইসলাম খানের রাজত্বকালে আফগান ও মগ জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে ঢাকা শহরকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বাংলার শাসন কর্তৃত্ব রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। দ্বিতীয়বারের মতো রাজধানী ঘোষণা হলো ঢাকা। ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ এবং ১৬০৮ থেকে ১৬১২ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসন এবং কম্পানি শাসনের বিরুদ্ধে ঢাকার ধারাবাহিক রাজনৈতিক গুরুত্ব সীমাহীন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড ঢাকা। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড় আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ঢাকা। সর্বভারতীয় বিপ্লবী দল অনুশীলনের প্রধান কার্যালয় ছিল এই ঢাকা শহরের দক্ষিণ মৈশুণ্ডিতে। ১৮৫৭ সালে সিপাহিদের গণজাগরণ থেকে ২০১৩-এর ৫ ফেব্রুয়ারির শাহবাগের গণজাগরণ- ঢাকায়ই। ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার কেন্দ্রভূমি ঢাকা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের গরিমাময় মাটিও ঢাকা। দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৪০০ বছরের সব বিদ্রোহ-বিপ্লবের কেন্দ্রভূমি ঢাকা। ঢাকার আলোকিত অতীতদিনের স্মৃতি নিয়ে আমাদের পথপরিভ্রমণ এগিয়ে চলে ভাসানটেক এলাকায়।
নিজেদের অবস্থা ও অবস্থান খুঁজে ফিরে পেতে নজর দিতে হয় ঢাকার প্রকৃত তথ্যচিত্রে। শহর ঢাকা ভৌগোলিকভাবে দেশের ১ শতাংশ জায়গা। জনসংখ্যার ১০ শতাংশ ও শহুরে মানুষের ৩৬ শতাংশ এইটুকু জায়গায় বাস করে। আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের ৪৪ শতাংশও এখানে। আবার রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের ৮০ শতাংশ কারখানা গড়ে উঠেছে এখানেই। বন্যা, গাদাগাদি-ঘিঞ্জি পরিবেশ ও বিশৃঙ্খলা ঢাকার অগ্রগতি ব্যাহত করছে। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে ঢাকার পূর্বাঞ্চলকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে। ঢাকা নিয়ে এসব তথ্য ও নতুন পরিকল্পনার বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের ‘টুওয়ার্ড গ্রেট ঢাকা: আ নিউ আরবান ডেভেলপমেন্ট প্যারাডাইম ইস্টওয়ার্ড’ শিরোনামের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের একদল বিশেষজ্ঞ, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন গবেষক এবং বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) গবেষকেরা ২০১৮ সালে প্রতিবেদনটি তৈরি করেন। প্রতিবেদনটি বলছে, ঢাকা হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল শক্তিকেন্দ্র। জিডিপিতে ঢাকার অবদান ২০ শতাংশ। কিন্তু শহরটি পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি। ১৯৮০ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ৩০ লাখ, বর্তমানে তা ১ কোটি ৮০ লাখ। তাদের মধ্যে ৩৫ লাখ মানুষ বাস করে বস্তিতে। ঢাকার পশ্চিম অংশের সিটি করপোরেশন এলাকায় এক বর্গকিলোমিটারে বাস করে ৪১ হাজার মানুষ। এই শহরে গাড়ির গতি ঘণ্টায় সাত কিলোমিটার। শহরে যানজটের কারণে দৈনিক ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। উন্নতির জন্য ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, পরিণতিতে সামাজিক মূল্য দিতে হবে আরও বেশি। ২০৩৫ সালে বৃহত্তর ঢাকার জনসংখ্যা হবে আড়াই কোটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার সমৃদ্ধি মানে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। তিনি আরও বলছেন, তিনটি প্রধান কারণ ঢাকার উন্নতি-অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বন্যা ও জলাবদ্ধতা, ঘনবসতি ও এর ঘিঞ্জি পরিবেশ এবং বিশৃঙ্খলা। কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ঢাকার উন্নয়ন ঘটালে এই শহর বসবাসের উপযুক্ত হবে। কিন্তু এর জন্য এখনই কাজে নামতে হবে। অতীতে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কাজে যেসব দ্বৈততা ও বিশৃঙ্খলা ছিল, তা এড়াতে হবে। (দৈনিক প্রথম আলো: ৭ জুলাই ২০১৮) আর তাই অপ্রিয় শোনালেও কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর ভাষায় বলতে হয়, ঢাকার নাগরিক সমস্যার জন্য ঢাকার নাগরিকরাই দায়ী। বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে হলে নাগরিক সচেতনতা জরুরি। (দৈনিক কালের কণ্ঠ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭) আমরা আমাদের শহরকে, দেশকেও বসবাসের যোগ্য করে তুলতে চাই, কবি সুকান্তের নবীন শিশুটির জন্য মানবিক পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই বলেই যে যার অবস্থান থেকে দেশপ্রেমের গোপন শপথ ‘দেশ আমার দায়িত্ব আমার’ গ্রহণ করে আরেকটু বেশি সক্রিয় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে পারি না কী ?
২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসেরও বেদনার দিন। অত্যন্ত বেদনাদায়ক এই ঘটনাকেও আমরা স্মরণ করছি। ঘটনার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আজও নিহত অনেক শ্রমিকে লাশের খোঁজ পায়নি স্বজনেরা। আজও মেলেনি নিহত-নিখোঁজের সঠিক সংখ্যা। ২০১৩ সালের এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রানা প্লাজা নামের ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটিতে নিউওয়েভ বটম, প্যানথম অ্যাপারেল, প্যানথম ট্যাক, আর্থ ট্যাক এবং নিউওয়েব স্টাইল নামের পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিল। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) হিসাবমতে, ওই পাঁচ কারখানায় শ্রমিক ছিল তিন হাজার ৯৪১ জন। এর মধ্যে জীবিত ও আহত শ্রমিক উদ্ধার করা হয় দুই হাজার ৪৩৮ জনকে। নিহত হয় এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক। নিখোঁজ হয় ৩৬৫ জন শ্রমিক। এর মধ্যে ডিএনএ টেস্ট করে ২৬৫ জনের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়। রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর নাজুক অবস্থার মুখোমুখি হয় দেশের প্রধান রফতানি খাত পোশাক শিল্প। এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি চাপে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশের প্রধান রফতানি খাত। রানা প্লাজা ধসের হতাহত আমাদের মা-বোন-ভাইদের সকলের প্রতিই জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। সবাই আশা প্রকাশ করি আর যেন একটিও দুর্ঘটনা না ঘটে। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক সকল ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সকল মহলই সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন।
[hfe_template id=’81’]
“জীবন মানুষের সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ। এই জীবন সে পায় মাত্র একটি বার। তাই এমনভাবে বাঁচতে হবে, যাতে বছরের পর বছর লক্ষ্যহীন জীবন যাপন করার যন্ত্রণা ভরা অনুশোচনায় ভুগতে না হয়। যাতে বিগত জীবনের গ্লানি ভরা লজ্জার দহন সইতে না হয়। এমনভাবে বাঁচতে হবে যাতে মৃত্যুর মুহূর্তে মানুষ বলতে পারে, আমার সমগ্র জীবন আমার সমগ্র শক্তি আমি ব্যয় করেছি এই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আদর্শের জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামে।” মহান রুশ কথাশিল্পী নিকোলাই অস্ত্রভস্কি’র এই মহান বাণী সত্য হয়ে উঠেছিল ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল, রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে। এ ভূ-খণ্ডের গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসের এই অবিস্মরণীয় দিনে তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকারের রক্তের হোলি খেলায় ঝরে যায় বিপ্লবী প্রাণ। ১৯৫০ সালের এই দিনে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ‘খাপড়া ওয়ার্ডে’ নিরস্ত্র অসহায় কমিউনিস্ট রাজবন্দিদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই সাতজন বিপ্লবী প্রাণ হারান। বন্দি অবস্থায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী সুধীন ধর, বিজন সেন, হানিফ শেখ, সুখেন্দু ভট্টাচার্য, দেলোয়ার হোসেন, কম্পরাম সিং ও আনোয়ার হোসেন। আহত হন ৩২ জন। তাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন। সেদিনের লড়াইয়ে একদিকে ছিলেন নিরস্ত্র রাজবন্দিরা, অন্যদিকে ছিল গণসংগ্রামে ভীত সরকারের সশস্ত্র পেটোয়াবাহিনী। ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড দিবসে, হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকীতে খাপড়া ওয়ার্ডের শহীদদের ও আহতদের সকলের স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। খাপড়া ওয়ার্ডের শহীদ-যোদ্ধাদের আদর্শ, লড়াই ও আত্মত্যাগ থেকে নতুন প্রজন্মের শিক্ষা নেওয়ার আছে। কারণ শহীদের কখনো মৃত্যু হয় না, তাঁরা মানুষের মনের মাঝে রয়ে যান। জাতীয়ভাবে এ দিনটি পালনের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি। শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য আচরণের স্থায়ী ইতিবাচক পরিবর্তন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চেতনা বিকাশের সাথে মানব কল্যাণ সাধন, মনুষ্যত্বের বোধের জাগরণে ঘটনাগুলোর তাৎপর্য গভীর বলেই উল্লেখ করতে দ্বিধা করলাম না।
একজন শিক্ষক হিসেবে যেমন তেমনি সরকার ও রাজনীতির শিক্ষার্থী হিসেবেও জানি, দীর্ঘমেয়াদী হলেও শিক্ষায় বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ। পিছিয়ে থাকা, অনগ্রসর ও বঞ্চিত মানুষের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির চেয়ে মহত্তম উদ্যোগ হতে পারে না। জীবনমুখী শিক্ষার আলো শোষণের অন্ধকারকে দূর করে, অসীম সম্ভাবনার সুপ্ত শক্তিতে বিকশিত করে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক অকৃত্রিম প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার সংযোগের কোন বিকল্প নাই বলেই শিক্ষাবিদগণ মত প্রকাশ করেছেন। মহান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন মনে করতেন, ‘ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় শিক্ষক’। আইনস্টাইন আরো বলেছিলেন, ‘জ্ঞানের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কল্পনা’, ‘কখনোই প্রশ্ন করা থেকে বিরত হবে না’ এবং ‘খালি পেট ভালো রাজনৈতিক উপদেশ দেয় না’। বিংশ শতাব্দীর সেরা মানুষ, বিজ্ঞানী, পদার্থতত্ত্ববিদ, অ্যালবার্ট আইনস্টাইনকে একজন শিক্ষক হিসেবে তাই আমার অতি আপনজন, স্বজন মনে হয়। তাঁর ‘ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় শিক্ষক’চেতনার সম্প্রসারণে আজকের এই বিশেষ দিনে একান্ত কামনার চেয়ে আর বেশি কী করতে পারি বেদনাহত আমরা?
তথ্যসূত্র:
১. ভাসানটেক বস্তিতে নারী (১৯৭৪-২০১০) : লুকনা ইয়াসমিন, ইতিহাস সমিতি পত্রিকা, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, সংখ্যা: ৩৩-৩৪, ১৪১৭-১৯, পৃষ্ঠা: ৩১১-৩২৯
২. ভাসানটেক বস্তিবাসীর ঐক্য (১৯৭৪-২০০৫) : একটি পর্যালোচনা, ইতিহাস সমিতি পত্রিকা, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, সংখ্যা: ২৯-৩০, ১৪১২-১৪, পৃষ্ঠা: ৩০১-৩২৪
৩. বস্তিবাসীর স্মৃতিতে ভাসানটেক (১৯৭৪-২০০৩): : লুকনা ইয়াসমিন, রিসার্চ ইসিসিয়েটিভ বাংলাদেশ (রিইবি), ২০০৬
৪. দৈনিক প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকা, ইন্টারনেট।

আবদুল্লাহ আল মোহন
পাবনা জেলার যমুনাতীরের নগরবাড়ী ঘাটের সন্তান আবদুল্লাহ আল মোহন। বর্তমানে ভাসানটেক সরকারী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বিষয়ে গবেষণায় দেশ-বিদেশের আগ্রহী পাঠকদের মাঝে তাঁর রচনা যেমন মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, তেমনি মনস্বী শিক্ষাবিদদের কাছেও পেয়েছেন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। ভাসানটেক সরকারী কলেজের মুজিববর্ষ পালন কমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মোহনের ইতিমধ্যে মুজিববর্ষেই প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সংক্রান্ত গবেষণামূলক গ্রন্থ এবং ভ্রমণগদ্য- ‘খোকা থেকে মুজিব : বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা’, ‘সম্পর্কের সেতুবন্ধনে : বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা’, ‘বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ’, ‘হাসু থেকে শেখ হাসিনা : জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী’ এবং ভ্রমণকাহিনি ‘দৃষ্টি ও অন্তর্দৃষ্টির ভারত ভ্রমণ’। প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে আরো কয়েকটি গ্রন্থ। শিক্ষাকে শিক্ষার্থীর জন্য সৃজনশীল ও আনন্দময় করে তুলতে মোহনের অভিনব প্রচেষ্টা আনন্দময় সহশিক্ষার সৃজনশীল আয়োজন ‘মঙ্গল আসর’ এবং ‘গড়ি ঘরে ঘরে পাঠাগার’ কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য। সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগেও তৈরি করা হয়েছে তথ্যচিত্র ‘মোহনের মঙ্গল আসর।