(ছবির ডান দিকে) জনাব খায়রুজ্জামান কামালের সাথে লেখক
সহকারী অধ্যাপক, গবেষক —
১.
আমাদের অজানা নয় মোটেই- বিবর্তনের স্রোতে ভেসে মানবসভ্যতা সামনের দিকে এগিয়েছে। জীবনকে উপভোগ্য ও অর্থবহ করার ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই। সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের ধারণাও মানুষের কল্যাণকর ভাবনার চমকপ্রদ উদ্ভাবনী। রাজতন্ত্র থেকে আধুনিক গণতন্ত্র- প্রবৃত্তিগত জোটবদ্ধতার অনুকূলে মানুষের নিরন্তর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার এ এক পর্যায়ক্রমিক উত্তরণ। গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র- আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নাগরিকের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কাঠামো ক্রমাগত যুক্তিগ্রাহ্য, মানবিক ও শ্রেয়তর করার অব্যাহত প্রচেষ্টার মাঝেই নিহিত আছে সভ্যতার উৎকর্ষ সাধনে মানুষের চিরকালীন আকাঙ্ক্ষা। সভ্যতার ধারাবাহিক এই ইতিহাসের পাতায় তাই চোখ রাখতেই হয় যে কোন সচেতন মানুষকে। কেননা আধুনিক যুগ মুক্তচিন্তা আর অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগ। তথ্য আমাদের পৃথিবী দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে। তথ্যের মাধ্যমেই নিজেদের সম্পদ ও উপায়গুলো জেনে আমরা যাপিত-জীবনের সর্বোচ্চ সুবিধাটা নিতে পারি। তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট। এর ফলে বাধাহীন বহু গণমাধ্যম হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে মূল্যবান নির্দেশক। আর এভাবেই গণমাধ্যম হয়ে উঠে সমাজের আয়না। গণমাধ্যম যখন নিরপেক্ষভাবে মুহুর্তের প্রতিচ্ছবি ধারণ করে তখনই সমাজ-সম্প্রদায়-রাষ্ট্রের প্রকৃত অবস্থা ধরা পড়ে। অমর্ত্য সেনকে স্মরণে রেখে বলতে পারি, জনকল্যাণমুখী গণতন্ত্রের জন্য মুক্ত গণমাধ্যম প্রয়োজন। আধুনিক গণতন্ত্র ‘সজ্ঞান রাজনীতি’ বা ‘ইনফর্মড পলিটিকস’। যেহেতু নাগরিকেরা আগের চেয়ে অনেক সচেতন, তারা চাইবে গণমাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক মত-পথের তর্ক-বিতর্ক প্রকাশিত-প্রচারিত হোক। তারা আবেগের চেয়ে যুক্তির প্রয়োগ বেশি ঘটাবে। জনসমর্থন পেতে রাজনীতিকেরা তাদের কাছে ভবিষ্যতের উন্নয়ন নীতিমালা ব্যাখ্যা করবে। জবাবদিহি কীভাবে হবে, বলে যেতে হবে। জনকল্যাণে জবাবদিহিতার প্রশ্নে, রাষ্ট্রীয় জীবনে সংবাদমাধ্যমের অসীম গুরুত্ব ও অপরিসীম ভূমিকার কারণেই আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেফারসন যেমনটি বলেছিলেন, ‘যদি আমাকে বলা হয় কোনটা বেছে নেব, সংবাদপত্র ছাড়া সরকার, না সরকার ছাড়া সংবাদপত্র ? তবে আমি বেছে নেব শেষেরটিকে’। মুক্ত গণমাধ্যম শান্তি, ন্যায়বিচার, টেকসই উন্নয়ন ও মানবাধিকারের জন্য অপরিহার্য। স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য তথ্যে প্রবেশাধিকার ছাড়া কোনো গণতন্ত্রই সম্পূর্ণ নয়। অন্ধ অনুকরণ কিংবা শুধু প্রশংসা নয় বরং প্রশংসার সাথে সমালোচনার মিশ্রণেই কেবল একটি সরকারকে সফল করে তুলতে পারে এবং সরকারও দেশকে কাঙ্খিত গন্তব্যে নোঙর করাতে পারে। কাজেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার স্বার্থে এবং গণতান্ত্রিক বিকাশের ধারায় সমালোচনা এবং প্রশংসাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সময়ের দাবী। কারণ ‘যেসব দেশে গণমাধ্যম স্বাধীন, সেসব দেশে দুর্ভিক্ষ হয় না।’ অমর্ত্য সেনের এই অনুধাবনও বেশ পুরোনো। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমরা দেখতে পাই, গণতন্ত্র কেবল সেখানেই বিকশিত হতে পারে, যেখানে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। সাংবাদিকেরা যেমন আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা করেন, তেমন আমাদেরও উচিত তাঁদের রক্ষা করা। বিশ্বের সর্বত্র নাগরিকদের সুবিধার জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আর একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংবাদ মাধ্যম তথা সাংবাদিকেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। ধান ভানতে শীবের গীতের মতো শোনালেও কথাগুলো প্রাসঙ্গিক হয়ে প্রাণে জাগে যে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বকে নিয়ে লিখতে বসে, তিনি সুপরিচিত মানবাধিকার কর্মী খায়রুজ্জামান কামাল। যিনি মনেপ্রাণে গভীরভাবে বিশ্বাস করেন- একজন ভাল সাংবাদিক হতে হলে প্রথমে তাকে একজন ভাল মানুষ হতে হবে, মানবাধিকার সচেতন কর্মী হতে হবে। সাংবাদিকের মধ্যে একজন আদর্শ সৎ মানুষের গুণাবলী না থাকলে ভাল সাংবাদিক হওয়া সম্ভব না। ১ জুন তাঁর জন্মদিন। জন্মদিনে আমাদের সকলের প্রিয় এই গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বকে জানাই অসীম শ্রদ্ধা, ফুলেল শুভেচ্ছাঞ্জলি।
২.
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব খায়রুজ্জামান কামাল উত্তর জনপদের প্রবেশদ্বার হিসাবে পরিচিত পাবনার নগরবাড়ি নৌবন্দর অধ্যুষিত রঘুনাথপুর গ্রামে ১৯৬২ সালের ১ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নগরবাড়ি নৌবন্দরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবি মরহুম আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ মিয়া ও মাতা আলহাজ্ব হাসিনা বেগম। খায়রুজ্জামান কামাল বর্তমানে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সিনিয়র সাংবাদিক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। বিগত চল্লিশ বছর তিনি পাবনা ও ঢাকার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত। তাঁর স্ত্রী উম্মে ফারওয়া ডেইজী একজন উন্নয়নকর্মী। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় প্রায় তিন যুগ ধরে কাজ করছেন। তাঁদের দু সন্তান। সম্প্রতি এই পরিবারে যোগ হয়েছে আরেকজন অতিথির, পুত্রবধুর। অতিমারী করোনার নিরাশারকালের এই শুভদিনে সকলের জন্যই শুভ কামনা নিরন্তর।
৩.
তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্বপ্নের সংগঠন বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ)। ১৯৯১ সালের ১০ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত সেই সংগঠনের জন্মলগ্ন থেকে জড়িত থাকার অভিজ্ঞতায়, সারাদেশে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশিক্ষণ আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্টতার সুবাদে দৃঢ়কণ্ঠে বলতে পারি, দল-মত-বয়স নির্বিশেষে সবাইকে আপন করে নেওয়ার যে চারিত্রিক অনন্য বৈশিষ্ট্য তাঁর মাঝে দেখা মেলে, আমাদের কাছে তা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবেই শ্রদ্ধা অর্জন করেন। তাঁর সরলতা ও সততার জীবনদর্শন, অসম্ভব পরিশ্রমী মানসিকতা, অফুরন্ত ইতিবাচক চিন্তাচর্চা যে কাউকেই মুগ্ধ করে, করবে। দলীয় মতাদর্শ ও দলতন্ত্রের যে অনুসারীরা গণমাধ্যম পরিচালনা করেন কিংবা বিভিন্ন সংগঠনে জড়িত, দম্ভ যাদের অন্ধ করে দেয়, তিনি সেই দম্ভ ও অন্ধ দৃষ্টি অপনোদনে ভূমিকা রেখে চলেছেন তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে, মানবিক গুণাবলীর অকৃত্রিম আন্তরিকতায়। আজন্মের এই গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সাংবাদিকতা পেশার প্রচলিত রীতিনীতি, মূল্যবোধ বিসর্জন দেওয়ার পক্ষে নন মোটেই। মানবিক এক পৃথিবী গড়ার সহায়ক যে কোন মত বা অবস্থানকে যৌক্তিক মনে করলে সেটা গ্রহণে দ্বিধাহীন থাকতে দেখি, তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন না মোটেই। তিনি ভিন্নমতে বিশ্বাস করেন, যুক্তিবাদের ভিন্নমত প্রকাশও করতে জানেন। ভিন্নমতের প্রতি অসহনশীলতাকে তিনি মেনে নেন না। কারণ সেটা সবাইকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন। গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যমের পরস্পরের ক্ষেত্রেই এই মূল্যবোধের ধারণ, জাগরণ ও বহি:প্রকাশ গভীরভাবে প্রযোজ্য। পরমতসহিষ্ণুতা তাই তাঁর জীবনাচরণে প্রবলভাবে দৃশ্যমান বলেই তিনি সকলের কাছে সম্মানিত হন, তেমনি সমীহও আদায় করেন।
৪.
এবার একান্ত ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলেই নয়। খায়রুজ্জামান কামাল শুধু আমার বড় ভাইই নন, আমার গড়ে ওঠার, বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অন্যতম পথপ্রদর্শক, জীবনাদর্শ সৃজনে আলোকিত মেন্টরও বটে। তাঁর সহধর্মিনী, আমার ‘মায়ের মতোন ভাবী’ উম্মে ফারওয়া ডেইজীর অনন্য ভুমিকা ও অবদানের কথা সবটা লিখে প্রকাশ করার ভাষা আমার অজানা। তাঁদের দু’জনের প্রতি আমার আজন্মের কৃতজ্ঞতা। আমার যা কিছু করে চলা তার নেপথ্যের সদা অনুপ্রেরণাদানকারী দু’জনের অস্তিত্বই আমি শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের মতেই নিত্য অনুভব করি। আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন প্রিয় এই মানুষটিকে এবং তাঁর আলোকিত পরিবারকে উৎসর্গ করেছি আমার প্রকাশিত ‘হাসু থেকে শেখ হাসিনা : জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী’ গ্রন্থটি। তাঁর রচিত এবং প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে অন্যতম- ‘মানবাধিকার চর্চা’।
৫.
তিনি তাঁর পেশাগত জীবনের গোড়া থেকেই মেধা ও দক্ষতার ছাপ রেখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীজীবনে সাংবাদিকতাকালে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলিতে কুশলী সাংবাদিকতার ছাপ রাখতেই সচেষ্ট থেকেছেন। ক্রাইম রিপোর্টার বা অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিক হিসেবেও তাঁর কুশলতা আমাদের মনে দাগ কাটে। আমাদের এই অনগ্রসর, দুর্নীতিপরায়ণ সমাজে পদে পদে লাঞ্ছনা-গঞ্জনার ঘটনা ঘটে থাকে। এ ধরনের সংকটের শিকার হতে হয়েছে তাঁকেও। তবু তিনি পিছু হটেন না নিজ কর্তব্যবোধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে। তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলিতে এত সব বিচিত্র কাহিনি ও ঘটনা, যা প্রশিক্ষণকালে উপস্থিত অংশগ্রহণকারী, শ্রোতামণ্ডলীকে মুগ্ধ করে। জাতীয় প্রেসক্লাবকে তিনি মনে করেন তাঁর দ্বিতীয় বাড়ি। তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য তিনি দলমত-নির্বিশেষে সবার সঙ্গে মিশতে পারতেন। তিনি সহজেই মানুষকে কাছে টানতে পারেন। তিনি ব্যক্তিগত সম্পর্ককে রাজনীতি তথা সব মত ও পথের ঊর্ধ্বে স্থান দিতেন। সাংবাদিক ইউনিয়ন বা জাতীয় প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সবার সঙ্গে সদ্ভাব রাখতে জানেন। প্রয়োজনীয় সত্যকথনে সংশয়হীন যেমন, তেমনি স্নেহ-ভালোবাসা মিশ্রিত তাঁর উপদেশ কেউ উপেক্ষা করেন বলে দেখা মেলেনি।
৬.
খায়রুজ্জামান কামাল পাবনার বেড়া উপজেলার নাটিয়াবাড়িস্থ ধোবাখোলা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, পাবনা সরকারী এডওর্য়াড কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়াও ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক ও স্বাস্থ্য যোগাযোগের উপর ফেলোশিপ এবং বাল্টিমোরের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রাম (বিসিসিপি) থেকে এডভোকেসী ও কমিউনিকেশনের উপর মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। উন্নয়ন, সাংবাদিকতা, সাংবাদিক অধিকার, মানবাধিকার, নারী ও শিশু অধিকার, স্বাস্থ্য ও সামাজিক যোগাযোগ, অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকতা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এর একজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রশিক্ষক হিসাবে বিগত তিন দশক যাবৎ কাজ করছেন। প্রশিক্ষক হিসাবে প্যানোস সাউথ এশিয়া, প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি), বাংলাদেশ প্রেসকাউন্সিল ও জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউশন (নিমকো)সহ জাতীয় পর্যায়ের এনজিও সমুহে কাজ করে আসছেন।
৭.
খায়রুজ্জামান কামাল পাবনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক বিবৃতি, ঢাকার দৈনিক গণকণ্ঠ, দৈনিক জনতা, দৈনিক রুপালী, দৈনিক আল-আমীন, দৈনিক মতিৃভূমি, দৈনিক নবচেতনায় ও অন-নাইন নিউজ পেপার আইএনবি, ফোকাস বাংলা নিউজ, ওএমএস নিউজ এর পর্যায়ক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার, স্টাফ রিপোর্টার, ক্রাইম রিপোর্টার, সিনিয়র রিপোর্টার, সিটি এডিটর ও নিউজ এডিটর হিসাবে কাজ করেছেন। উল্লেখ্য, খায়রুজ্জামান কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ঢাবিসাস) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে সভাপতি ছিলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ঢাকাস্থ উত্তরবঙ্গ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঢাকাস্থ রাজশাহী বিভাগ সাংবাদিক সমিতি ও পাবনা সাংবাদিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। বর্তমানে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জানার্লিস্ট (আইএফজে) ও দক্ষিণ এশিয়া ভিত্তিক সাউথ এশিয়া মিডিয়া সোলিডারিটি নেটওর্য়াক (স্যামসন) এর সাথে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন। জাতীয় পর্যায়ের মানবাধিকার সেক্টর ভিত্তিক এনজিওদের সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ (বামাসপ), শিশু অধিকার ভিত্তিক এনজিওদের সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএফ), স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিওদের সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান এসটিডি/এইডস নেটওর্য়াক অব বাংলাদেশ ও আরবান ভিত্তিক এনজিওদের সমন্বয়কারী সংস্থা কোয়ালিশন ফর আরবান পুর (সিইউপি) এর নির্বাহী পরিষদে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির একজন সিনিয়র সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিষ্টার গ্রাজুয়েট এসোসিয়েশন এর আজীবন সদস্য।
৮.
বংলাদেশের অনলাইন মিডিয়ার সংখ্যা অনেক। এসব মিডিয়ায় জনবলের প্রশিক্ষণ তেমন নেই। একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক হিসেবে এ বিষয়ে খায়রুজ্জামান কামাল বলেছেন; আমি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তিনটা অনলাইন মিডিয়ায় নিউজ এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এসেছি। তিনটা অনলাইন নিউজ মিডিয়া হাউসের অভিজ্ঞতায় আলোকে আমি বলবো, একজন অনলাইন মিডিয়ার জার্নালিস্ট হিসেবে তার যে যোগ্যাতা দরকার এ ধরনের লোকজনের সংখ্যা খুবই কম। তবে যেহেতু বাংলাদেশের অনলাইন নিউজপোর্টালের কোনো নীতিমালা নেই, তাই দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো অনলাইন নিউজপোর্টাল বাড়ছে। এসব নিউজ পোর্টাল হাউসগুলো দক্ষ লোকের প্রয়োজনও মনে করে না। মাত্র কয়েকটা ভাল নিউজ পোর্টাল যেমন-বিডিনিউজ, বাংলানিউজ, রাইজিংবিডি, বাংলামেইলসহ কয়েকটি হাউজে দক্ষ লোকবল রয়েছে। তাছাড়া শুধু অলাইন নিউজপোর্টালের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির কোন উদ্যোগ আমার চোখে পড়েনি। সরকারিভাবে এ রকম প্রশিক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। আর বেসরকারিভাবে আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে সরকারিভাবে অনলাইন সংবাদকর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
৯.
বিশ্বায়নের কালে অসংখ্য তথ্যসূত্রে মানুষের প্রবেশাধিকার বেড়েছে। এই সময়ের সাংবাদিকতাকে যেভাবে দেখছেন তিনি; তাঁর মতে, আগে অদেখা নতুন দুনিয়ার তথ্যবাস্তবতাকেও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। বিশ্বায়নকালে ইন্টারনেটের কারণে চোখের পলকে দুনিয়া হয়ে বসল গ্লোবাল ভিলেজ। পত্রিকা আর টেলিভিশনেই জনতাকে আটকে থাকতে হচ্ছিল না। অনলাইন দুনিয়া তথ্য নানা রূপে, নানা প্রকরণে আমজনতার নাগালে পৌঁছাতে লাগল। সৃষ্টি হলো ‘সিটিজেনস জার্নালিজম’–এর। জন্ম হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের। নৃবিজ্ঞানী অর্জুন আপ্পাদুরাইয়ের ‘মিডিয়াস্কেপ’ ধারণাটিকে নোয়াম চমস্কি যেমন গুরুত্ব দিতে শুরু করলেন, অমর্ত্য সেনও আমলে নিলেন। ‘মিডিয়াস্কেপ’ ধারণাটি দিয়ে আপ্পাদুরাই বলেই রেখেছেন, বিশ্বায়নের পাঁচটি ক্রীড়নকের অন্যতম ‘তথ্যের অবাধ প্রবাহ’। এই প্রবাহ প্রপাতের জলের তোড়ের মতো। বাধা পেলে উপচে পড়বে। অমর্ত্য সেন মুক্ত গণমাধ্যমের অনেক প্রয়োজনীয়তার মধ্যে চারটিতে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তিনি যেমনটি বলেছেন, উপেক্ষিত ও অবহেলিত মানুষের কথা আলোয় আনতে হলে মুক্ত গণমাধ্যম লাগবেই। কারণ বিশ্বায়নের সুযোগ তারা পায় না। যেমন ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ বাস্তবতা। দরিদ্র মানুষের ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার থাকে না। তাদের বড় অংশের টেলিভিশন, রেডিও বা সংবাদপত্রের খবরেও প্রবেশাধিকার নেই। চার, ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ নিশ্চিত করতে হলে গণমাধ্যমের মুক্ততার কোনোই বিকল্প নেই। যেমন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিত হওয়ার অর্থ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার টুঁটি চিপে ধরা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হলে দুর্নীতি বাড়ে, ক্ষমতাবলয়ের বাড় বাড়ে, গণবিরোধী অপরাধীচক্র বাড়ে। সামাজিক ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে পড়ে।
১০.
আমাদের সংবিধানের বাক স্বাধীনতার বিষয় উল্লেখ করে তিন বলছেন; আমাদের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত বাক স্বাধীনতার কথা স্মরণ করতে চাই। সেই সাথে উল্লেখ করতে ভুলছি না, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, একটি মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হচ্ছে একটি মৌলিক মানবাধিকার যা বিশ্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা’র ১৯ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে । অনুচ্ছেদটি এরকম- প্রতিটি মানুষেরই বাক স্বাধীনতা এবং নিজের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। এই অধিকার আরো নিশ্চয়তা দেয় যে, কোনো হস্তক্ষেপ বা ভয়-ভীতি ছাড়াই তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে তার মতাদর্শ তুলে ধরতে পারবেন। বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে তথ্য গ্রহণ করতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী যোগাযোগের অধিকারও তিনি রাখেন। যদিও পরিস্থিতি কখনো কখনো দ্বান্দ্বিক সীমায় পৌঁছে যায়। গণমানুষের ক্ষমতায়নের মতো বৃহৎ ডিসকোর্সে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং তথ্যে প্রবেশাধিকার অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ক্ষমতায়ন একটি বহুমাত্রিক সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যা গণমানুষকে তাদের জীবনের ওপর আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এই আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা তখনই সম্ভব যখন নাগরিকদের সঠিক তথ্যে প্রবেশাধিকার ঘটে এবং তারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তথ্য পায়।বিশ্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্ট লেখা আছে- ‘প্রত্যেকেরই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে: এই অধিকার কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া, প্রভাবমুক্ত মত প্রকাশ এবং যে কোনো প্রান্তের যে কোনো মাধ্যম থেকে তথ্যপ্রাপ্তি ও যাচাই-বাছাইয়ের স্বাধীনতা দেয়।’ যদিও আরএসএফের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এশিয়ার ‘অগণতান্ত্রিক’ দেশগুলোতে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তথ্য আটকে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। রাজনীতি কঠিন হয়ে যাওয়ায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
১১.
নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের প্রতি তাঁর পরামর্শ জানতে চাইলে সারাদেশ ঘুরে বেড়ানো গণমাধ্যমকর্মীদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট ব্যক্তিত্ব খায়রুজ্জামান কামালের পরামর্শ হলো; সাংবাদিকতায় যারা আসতে চায় তাদেরকে আমি বলবো যে সাংবাদিকতা একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা। একজন সাংবাদিককে প্রতিদিনই সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। আর সাংবাদিকতা হলো গুরুমুখী বিদ্যা। শুধু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি নিয়ে এসে চাকরি করলেই সাংবাদিক হওয়া যায় না। সাংবাদিকতার মৌলিক বিষয়গুলো একজন ভাল গুরুর কাছে হাতে কলমে শিখতে হবে। আমার মতে, যারা নবীন হিসেবে কোন হাউসে কাজ করতে চায় তারা প্রথমে সিনিয়দের অনুসরণ করুক। তারা কিভাবে কি করে তা দেখুক। সিনিয়রদের চলাফেরা, কথাবার্তা, আচার আচরণ সবই আয়ত্ত করুক। এই পেশায় এসেই বড় সাংবাদিক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কাজ করতে হলে জানা ও শেখার কোনো বিকল্প নেই। একজন সাংবাদিক যখন কোনো অ্যাসাইনমেন্টে যান, তখন তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠানকে উপস্থাপন করেন। তার কথাবার্তা, আচার-ব্যবহার দিয়ে সবার সামনে তার প্রতিষ্ঠানকে তুলে ধরে। তাই নতুনদের বলবো যারা সাংবাদিকতায় মডেল, সিনিয়র তাদেরকে অনুসরণ করতে হবে। সব চেয়ে বড় কথা হলো- একজন ভাল সাংবাদিক হতে হলে প্রথমে তাকে একজন ভাল মানুষ হতে হবে। সাংবাদিকের মধ্যে একজন আদর্শ মানুষের গুণাবলী না থাকলে ভাল সাংবাদিক হওয়া সম্ভব না।
১২.
বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশকে বুকে ধারণ করা পরম প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন এই অগ্রজের প্রতি জন্মদিনের অশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি।