মুহম্মদ রিশাদ হুদার কবিতা

মুহম্মদ রিশাদ হুদা

কবি, সাংবাদিক

বোতলজাত প্যালেস্টাইন

রক্ত গাঢ় হলে কালো হয়ে যায়
একাত্তর থেকে জানে বাংলাদেশ
যুগ যুগ ধরে নারী শিশুর রক্ত ঝরে
তাদের রক্ত বোতোলে ভরে
সারা দুনিয়ায় সুলভে বিক্রি করে।
যারা বলে, হায় প্যালেস্টাইন!
তারাও আসক্ত বোতলজাত রক্তে;
পরিবেশনকারী বিনয়ী ফ্রাঙ্কেস্টাইন।
জন্মের আগেই চুরি হয়েছে খাবার
জন্মের আগেই পরিচয়হীন, ভূমিহীন
আর বোঝানো হয়েছে তারা হীন।
যুদ্ধের আগে পরাজিত যারা
স্বাধীনতা এক নাটকের নাম
মানুষের পরিচয় ডান নয় বাম।
অতএব কোমলপানীয়ের নামে
গ্লাসে গ্লাসে টুংটাং হোক
উল্লাস হবে বিশুদ্ধ রক্তে।


যাবজ্জীবন

হাতে মৃত্যুর ফরমান
জল্লাদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না
সারা জীবনের আমলনামা তুলে
অনেক যুক্তি তর্ক আর প্রমাণের পর
হাতে এলো এই কাঙ্খিত ফরমান
মুশাবিদার কেউ ছিলো না
কোন সাক্ষী সাক্ষ্য দেয়নি
বিচারকের চোখে ছিলো বিস্ময়
উকিলের কোনো উপায় ছিল না
শেষমেশ ফরমান দিতেই হলো
অনেকেই বলেছিলো দাও আত্মহুতি
আত্মার বিচারে লোক দেখানোই সুশীলতা
তাই লোকের পরামর্শ বাতিল
পাপ পূণ্যের হিসেবে দন্ড হলো ঠিকই
কিন্তু জল্লাদ আর পাওয়া গেল না
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এ জীবন।


গোরস্থানে ঝগড়া হচ্ছে

কত ভগ্ন হৃদয় ও রক্তক্ষরণের সাক্ষী
শত প্রত্যাখ্যানের ফসিল বুকের খাঁচায়
সামনে ফুলদের গনকবর
কোন বংশধর নেই জমিনের উপর
প্রতিনয়ত প্রতিবাদ আসে কবর থেকে
সম্মান জানানোর নেই কোনো প্রতীক
মরেও শান্তি পাননি তারা কোলাহল থেকে
নদীর পানি আচানক আগুন হয়ে বয়
গিরি পরিবার মিলেমিশে সব তাপ সয়
শীতে যে ছাগল চাপিয়েছে বাঘের পিরান
চার পেয়ে সমাজে সেই তো মোড়ল
গোরস্থানে ঝগড়া হচ্ছে
কবরে কবরে বিতর্ক
চলছে গালাগাল, সভা সেমিনার
প্রতিবাদ হচ্ছে
প্রতিবাদ হচ্ছে
মৃতরা দাঁড়িয়ে যাচ্ছে
মৃতরা দাঁড়িয়ে যাচ্ছে
করছে মুর্দাবন্ধন
কার জন্য প্রিয় প্রাণে এত অশান্তি


লাশেদের গোসলখানা

মনোযোগ না পেলে
আত্মহন্তুারক হয় ।
অবাক বিষয়!
জেনে বুঝে অবজ্ঞা করা হলো।
রক্ত দিয়েই গেলো…
বিজ্ঞানের দোহাইয়ে সংকোচন প্রসারন
এ তো হৃদয়…
নাকি লাশেদের গোসলখানা?


কবরের দাবী

খুব ঝামেলা হচ্ছে
প্রশান্ত থাকছে না
চাই আরামে ঘুম
দুহাতে মঙ্গলকামনা
ঘুমের বিছানা কবর
খুবই বিরক্তিকর
দমে দমে বিঘ্নিত নিদ্রা
কাঁচা মাংসের গন্ধে
চাই গন্ধহীন কবর
রংধনু বৃষ্টির পর
হয়ে যাচ্ছে লিপস্টিক
সব কিছুই অবৈধ তার
কেনো না আমিই দাবীদার
তার মালিকানা আমার
খুব ঝামেলা হচ্ছে
খুব ঝামেলা হচ্ছে


হৃদয়পুর

ও বুকে হৃদয় বিকল বলে
এ বুকের হৃদয় চুরি !
মানা যায় না….
আজ অনেকের বুক খালি
সংসার তাদের পুতুলের সাথে
হাত-পা-মাথা স্বয়ংক্রিয় চলে
সমাজে বিকলাঙ্গ চিহ্নিত
নিজেকে লুকোতে ক্রমাগত বলে
গাছ এক আদি অকৃত্রিম বন্ধু
এমন হত্যা হয়নি গণহত্যায়
এমন বীভৎসতা কেউ দেখেনি
কোন শাস্তি উপযুক্ত নয়
শিকারেরা অপেক্ষায়
হবে শেষ বিচারে রায়
যুগ যুগ পার হলো
বোকারা হৃদয় শূন্য হলো
তবুও এ পাড়ার নাম হৃদয়পুর!


মুহম্মদ রিশাদ হুদা
কবি, সাংবাদিক
১৯৮২ সালের ২রা মার্চ ঢাকার ধানমন্ডিতে জন্ম। ছোটবেলা থেকেই কক্সবাজারে দরিয়ানগরে যাতায়াত। দাদা সেকান্দর সৌদাগরের কাছেই প্রথম প্রকৃতির পাঠ পান তিনি। সাত বছর বয়সেই লিখে ফেলেন ছোট গল্প –কুহু পাখি। ২০০২ সাল থেকে কবিতা লিখছেন। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ইশারা সভা‘। শিক্ষা, বিবিএ সম্মান ডিগ্রি। পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন সাংবাদিকতা। পেশার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৪ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে দেয় “দুদক মিডিয়া অ্যওায়ার্ড“। সাংবাদিকতা ছাড়া দেশবিদেশ ঘুরে বেড়ানো তার নেশা। ঘুরে বেড়িয়েছেন ভারতের কয়েকটি রাজ্য, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া আর দেশের বিভিন্ন জেলা। বাবা মুহম্মদ নূরুল হুদা খ্যাতিমান কবি। মা, শাহানা চৌধুরী অবসরপ্রপ্ত শিক্ষক। স্ত্রী, ফারহানা আহমেদ বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার একজন কর্মী।

Please Post Your Comments & Reviews

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected!!
Share via
Copy link
Powered by Social Snap