সাহিত্যকর্মে সত্যজিৎ রায়

সত্যজিৎ রায় যেমন ছিলেন একজন বিখ্যাত বাঙালি ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক, তেমনই তিনি বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্যও বিখ্যাত। তাঁর সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্র হল গোয়েন্দা ফেলুদা, বৈজ্ঞানিক প্রফেসর শঙ্কু তারিনীখুড়ো। তিনি এই তিনটি চরিত্র ছড়াও অনেক ছোট উপন্যাস ও ছোট গল্প রচনা করেছেন। তারঁ লেখার মূল লক্ষ্য ছিল কিশোর তরুণ পাঠক বর্গ, যদিও তিনি আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে প্রিয় লেখক ছিলেন।

তাঁর অধিকাংশ উপন্যাস ও গল্প প্রকাশ হয় কলকাতার আনন্দ প্রকাশনের মাধ্যমে, এবং তাঁর অধিকাংশ স্ক্রীনপ্লেগুলি তাঁর বন্ধু নির্মাল্য আচার্য সম্পাদিত “ঈক্ষণ” নামে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৯0-এর দশকের মঝামাঝি তাঁর অনেক চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখা এবং ছোত গল্পের সংকলন পাশ্চাত্যেও প্রকাশিত হয়। তাঁর অনেক গল্পই ইংরাজিতে অনুদিত ও প্রকাশিত হয়েছে।

প্রোফেসর শঙ্কু
১ প্রোফেসর শঙ্কু-নিউ স্ক্রিপ্ট, কলকাতা ১৯৬৫
২ প্রোফেসর শঙ্কুর কাণ্ডকারখানা-আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা ১৯৭০
৩ সাবাস প্রোফেসর শঙ্কু-আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা ১৯৭৪
৪ মহাসংকটে শঙ্কু-আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা ১৯৭৭
৫ স্বয়ং প্রোফেসর শঙ্কু-আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা ১৯৮০
৬ শঙ্কু একাই ১০০-আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা ১৯৮৩
৭ পুনশ্চ প্রোফেসর শঙ্কু-আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা ১৯৯৩
৮ সেলাম প্রোফেসর শঙ্কু-আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা ১৯৯৫

ফেলুদা সিরিজ
ফেলুদা, যাঁর আসল নাম প্রদোষ চন্দ্র মিত্র, হলেন কলকাতাবাসী একজন শখের গোয়েন্দা. সাধারণতঃ তাঁর সঙ্গী দু’জন: তোপসে (তাঁর খুড়তুতো ভাই- তপেশ রঞ্জন মিত্র) এবং লালমোহনবাবু (লালমোহন গাঙ্গুলী যিনি নিজে জটায়ু ছদ্মনামে রহস্য রোমাঞ্চের গল্প লেখেন।) সত্যজিৎ রায় ৩৫টি ফেলুদার গল্প লেখেন, যার সবই খুব জনপ্রিয় হয় এবং এর মধ্যে দু’টিকে নিয়ে তিনি নিজেই চলচিত্র তৈরি করেন – সোনার কেল্লা (চলচ্চিত্র) (The Golden Fortress) (1974) এবং জয় বাবা ফেলুনাথ (The Elephant God) (1978).

তারিণী খুড়োর গল্প
তারিণী খুড়ো হলেন একজন চিরকুমার (অবিবাহিত) মজলিশি বৃদ্ধ যিনি যিনি নিজের জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে গল্প বলতে ভালোবাসেন। তাঁর অনেক গল্পই রোমাঞ্চকর ভয়ের বা ভুতের গল্পের মত হয়ে যায় আবার অনেক গল্পে তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার প্রমাণ পাওয়া যায়।

অন্যান্য ছোট গল্প
তাঁর সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্রগুলির গল্প ছাড়াও সত্যজিৎ রায় আরো নানা গল্প রচনা করেছেন। এগুলির অনেকগুলিই সন্দেশ পত্রিকায় অথবা বারোটি করে গল্পের সংকলন হিসাবে প্রকাশিত হয়েছে- যেগুলি সরচিপূর্ণ পটভুমিকায় গড়ে তোলা, এবং গল্প হিসাবে প্রায় শেষ অবধি সাদামাঠা কিন্তু সমাপ্তির ঠিক আগে গল্প অদ্ভুত মোড় নিয়ে পাঠককে অবিস্মরণীয় অনুভুতির স্বাদ দিয়েছে। অধিকাংশ গল্পেই দেখানো হয়েছে কিভাবে সামান্য কোন ঘটনা কারুর জিবনে গভীর রেখাপাত করেছে, আবার কোন কোনটি রোমহর্ষক ভয়ের গল্প। এদের ভাষা খুবই সরল ও সাবলীল।

সত্যজিৎ রায় অনেক ছোট গল্প ইংরাজী থেকে অনুবাদও করেন যেগুলি বেশীরভাগই রোমাঞ্চকর গল্প যাদের মধ্যে কয়েকটি ব্রাজিলের কালো বাঘ বইটিতে প্রকাশিত হয়।

কবিতা
সত্যজিৎ রায় বেশ কিছু কবিতা অনুবাদ করেন ও কয়েকটি লিমেরিক রচনা করেন যেগুলির সংকলন – ‘তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম’ নামে প্রকাশিত হয়।

মোল্লা নাসীরুদ্দীনের গল্প
মধপ্রাচ্যের মোল্লা নাসীরুদ্দীনের অনেকগুলি গল্প সংগ্রহ করে সত্যজিৎ রায় মোল্লা নাসীরুদীনের গল্প নামে একটি সংকলন প্রকাশ করেন।

অন্যান্য
ফটিকচাঁদ গল্পটি একটি কিশোরকে নিয়ে; সুজন হরবোলা একজন হরবোলার কাল্পনিক জীবনবৃত্তান্ত যা সত্যজিৎ পরে সিনেমার রূপ দিয়েছেন। একেই বলে শুটিং সত্যজিত রায়ের নিজের শুটিংএর অভিজ্ঞতা ও চিন্তা ভাবনাকে নিয়ে লেখা. যখন ছোটো ছিলাম হল তাঁর বাল্যকালের স্মৃতিচারণ। Our Films, Their Films (আমাদের ছবি, তাদের ছবি) তাঁর চলচিত্র সমলোচনার সংকলন। বিষয় চলচ্চিত্র (১৯৮২) তাঁর লেখা চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রবন্ধের একটি সংকলন।বিভিন্ন সময় লেখা আঠারোটি প্রবন্ধ এখানে সন্নিবিষ্ট হয়েছে।

Please Post Your Comments & Reviews

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected!!
Share via
Copy link
Powered by Social Snap